ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসানে ‘কার্যকর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। জাতিসংঘে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে সোমবার (২৮ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘ সদর দফতরে তিনদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়। ফ্রান্স ও সৌদি আরব এই সম্মেলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ইসরাইল ও তার প্রধান মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলন বয়কট করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের জুনে এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল এবং এই সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় ফ্রান্স। কিন্তু ইরানে ইসরাইলি-মার্কিন আগ্রাসনের কারণে তা স্থগিত করা হয়।
প্রায় এক মাস পর সোমবার সম্মেলন শুরু হয়। এতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর কয়েক ডজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ ইসরাইল রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, এই সম্মেলন যেন চাতুরতাপূর্ণ কথার আরেক অনুশীলনক্ষেত্রে পরিণত না হয়। এই সম্মেলন একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে যা একটি কার্যকর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে আমাদের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবং জবরদখলেরে অবসানে একটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।’
ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্য নোয়েল ব্যারোট বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এমন উপায় বের করতে হবে যার মাধ্যমে গাজার যুদ্ধের অবসান থেকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান ঘটে। কেবল একটি রাজনৈতিক, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। এর বিকল্প নেই।’
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন বিভক্ত করার প্রস্তাব তোলা হয়। পরে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল এবং আরবদের জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ১৯৪৮ সালে ইসরাইলকে রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। দশকের পর দশক ধরে জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সমর্থন জানিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে ফ্রান্সও এই স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ তালিকায় যুক্তরাজ্যও যোগ দেবে বলে আশা ফ্রান্সের। জাতিসংঘের সম্মেলনে ইউরোপের আরও দেশ যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারটও।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ২২১ আইনপ্রণেতা। জবাবে স্টারমার বলেছেন, এই স্বীকৃতি অবশ্যই বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার পথে ছিল। তবে ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর জাতিসংঘের এ সম্মেলনে প্রাণসঞ্চার হবে। তবে গাজায় ২১ মাস ধরে চলা ইসরাইলের হামলা, দখলকৃত পশ্চিম তীরে নতুন নতুন বসতি স্থাপন এবং দখল করা এলাকাগুলো ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, তাতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান শেষ পর্যন্ত ভৌগলিকভাবে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।