উত্তরকাশীতে হড়পা বানে বাড়ছে মৃত্যু

Spread the love

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান। নদীর জল পাহাড় থেকে ধেয়ে এসে নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ধরালী গ্রামের বিস্তীর্ণ অংশ। ইতিমধ্যেই চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ বহু। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অন্তত ১১ জন জওয়ানও।স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও এসডিআরএফ হাতে হাত মিলিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। মঙ্গলবার মাঝরাতে উদ্ধার করা হয়েছে ৭০ জনকে। 

এই পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ধারালি অঞ্চলে সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ধামি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু এলাকায় অসুবিধা হচ্ছে ৷ তবে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করছে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দ্রুত সহায়তা পেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।আশঙ্কা ছিল, উদ্ধারকাজ যত এগোবে ততই বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যা। তবে প্রশাসনের তরফে বুধবার সকাল পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। ফলে উদ্ধারকাজে বাধা তৈরি হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে স্কুল, দোকান, হোটেল।

অন্যদিকে, ধারালি গ্রামের ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় বন্যার জল একাধিক হোটেলে ঢুকে পড়েছে। বন্যার জলের সঙ্গে ঘরবাড়ি ও দোকানেও কাদা-মাটি ঢুকে পড়েছে। জেলা প্রশাসন আপাতত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। ধ্বংসস্তূপের নীচে অনেক মানুষ চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারালি ক্ষীরগঙ্গায় জলস্তর বৃদ্ধির কারণে বাজার এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ধারালিতে ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ খবর নিয়েছেন।মঙ্গলবার দুপুর ১ টা ৫০ মিনিট নাগাদ, ধারালি গ্রামে প্রথম মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। কিছু সময় পরেই একই ধরনের দুর্যোগ হয় নিকটবর্তী সুখী টপ এলাকায়। মেঘভাঙা বৃষ্টির তীব্রতায় ক্ষীরগঙ্গা নদীর উচ্চ অববাহিকা থেকে ধেয়ে আসে বিশাল জলরাশি। সেই জলেই গ্রাম ভেসে যায়। কাদা, পাথর আর জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে একের পর এক বাড়ি। নদীতে তলিয়ে যায় বহু ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যয় যা ঘটার তো ঘটেই গিয়েছে, এখন যেন ধ্বংসস্তূপ ওই গ্রাম। প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে। জলের তোড়ে ভেঙে, ধুয়ে-মুছে গেছে ৪০ থেকে ৫০টা বাড়ি। ধারালি বাজারের একটা বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধারালির কাছে ভাটওয়াড়িতে প্রায় দেড়শো মিটার রাস্তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। রাস্তা মেরামতে ব্যস্ত আইটিবিপি। গোটা ক্ষীরগঙ্গা গ্রামটাই হড়পা বানে ভেসে গেছে।ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-এর সঙ্গে উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনাবাহিনী। মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে উত্তরকাশীর সুখি টপ ও হর্ষিলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৯ জন নিখোঁজ। ২ সেনা-সহ ১৩০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার।

এদিকে, উত্তরাখণ্ডজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বেশ কয়েকটি জেলায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রুদ্রপ্রয়াগে, রাতভর অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে অলকানন্দা নদী বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাময়িকভাবে কেদারনাথ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে । মান্ডি ও কুলুর মধ্যবর্তী অংশে ভারী বৃষ্টিপাত এবং একাধিক ভূমিধসের ফলে বন্ধ চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়ক। আরও পূর্বে, বাগেশ্বরে অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে, গোমতী এবং সরযূ নদীই উভয়ই উত্তাল। ক্রমবর্ধমান বন্যার উদ্বেগের মধ্যে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *