ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর শুরুর দিনেই ফের মৃত্যু। মঙ্গলবার সকালে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলায়। মৃতের পরিবার এবং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই নিজের জীবন শেষ করেছেন ওই যুবক। এই নিয়ে রাজ্যে ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচে।
জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম জাহির মাল, বয়স ২৮। হাওড়ার উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের খলিসানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। পেশায় দিনমজুর। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা তাঁর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। খবর যায় উলুবেড়িয়া থানায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের দাবি, এসআইআর নিয়ে ভয়ই কেড়ে নিয়েছে জাহিরের প্রাণ। মৃতের স্ত্রী রেজিনা বিবির কথায়, এসআইআর নিয়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও। সারাক্ষণ বলত, ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। কয়েক দিন ধরেই চিন্তায় ছিল, খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করত না। ভয়েই এই কাজ করে ফেলেছে ও।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই জাহিরের মনে অজানা আতঙ্ক কাজ করছিল। স্থানীয়দের দাবি, এসআইআর নিয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, আর সেই চাপই সহ্য করতে পারেননি এই যুবক। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় হাজির হন স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূলের নেতৃত্ব। রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমাদের দল মৃতের পরিবারের পাশে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি আরও দাবি করেন, মানুষকে ভুল পথে চালিত করে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক একেবারেই অযৌক্তিক।

অন্যদিকে বিজেপি দাবি করেছে, আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য দায়ী তৃণমূলই। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, এসআইআর নিয়ে ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিনে রাজ্যে একাধিক মৃত্যু ঘটেছে, যার পেছনে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এসআইআর-আতঙ্ক। গত ২৮ অক্টোবর আগরপাড়ায় এনআরসি-আতঙ্কে আত্মঘাতী হন মশারি ব্যবসায়ী প্রদীপ কর। ৩০ অক্টোবর বীরভূমের ইলামবাজারে আত্মহত্যা করেন ৯৫ বছরের ক্ষিতীশ মজুমদার, যিনি ভোটার তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বলে দাবি পরিবারের। এরপর ২ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে মারা যান দিঘার হোটেল ব্যবসায়ী শেখ সিরাজউদ্দিন। তাঁরও মৃত্যুর পেছনে এসআইআর সম্পর্কিত নথি সংশোধন নিয়ে মানসিক চাপের ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার হুগলির ডানকুনি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যান ৬০ বছরের হাসিনা বেগ।