কলকাতাকে ছাপিয়ে গেল পাহাড়! কতটা বৃষ্টি হল দার্জিলিংয়ে?

Spread the love

শনিবার রাতে একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত শৈলশহর দার্জিলিং। শহরের একাধিক জায়গায় ধস নেমে বিচ্ছিন্ন সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক তাণ্ডবে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সব মিলিয়ে বৃষ্টি ধসে বিপর্যস্ত গোটা উত্তরবঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে বড় তথ্য প্রকাশ করল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শুধু দার্জিলিংয়ে। এছাড়াও প্রবল বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার।

কলকাতাকে ছাপিয়ে গেল উত্তরবঙ্গ

জানা যাচ্ছে, কলকাতায় পুজোর আগে একটানা বৃষ্টিতে যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছিল, উত্তরবঙ্গে শনিবার রাতের বৃষ্টির পরিমান তার চেয়েও বেশি। তবে উত্তরবঙ্গে যে প্রবল বর্ষণ শুরু হবে তার আগাম পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। অতিভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে। কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহারেও। তবে বৃষ্টির পরিমান যে এতটা ভয়াবহ হবে তা আন্দাজ করা যায়নি। আলিপুর হাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দার্জিলিংয়ে মোট ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় কোচবিহারে ১৯০.২ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিলিমিটার এবং বাগডোগরা-শিলিগুড়িতে ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই উদ্ধার শুরু করে দিয়েছে জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এনডিআরএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু কার্শিয়াঙে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে আলিপুর হাওয়া অফিস এই তথ্য নিশ্চিত করেনি।

উত্তরবঙ্গের নদীর জলস্তর বৃদ্ধি

লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলা। শনিবার রাতে প্রবল জলস্রোতে মাদারিহাটের জলদাপাড়া টুরিস্ট লজের সামনে হলং নদীর কাঠের সেতু ভেঙে পড়ে, ফলে আটকে পড়েছেন একাধিক পর্যটক। কারণ, জলদাপাড়ার কিছু এলাকা বাকি ডুয়ার্সের বাকি অংশের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে যাওয়ার একমাত্র পথ হল এই সেতু। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টির জেরে নদীর জলস্তর বাড়তে থাকে। প্রবল স্রোতের চাপে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ভেঙে যায় কাঠের সেতুটি, যা দিয়ে প্রতিদিন পর্যটকরা টুরিস্ট লজ থেকে জঙ্গল সাফারিতে যেতেন। সেতু ভাঙার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন পর্যটক ও বনকর্মী। তাঁদের মধ্যে কেউ আহত হননি, তবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পর্যটকরা বর্তমানে টুরিস্ট লজেই আশ্রয় নিয়েছেন। বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, জলস্তর কিছুটা কমলেই উদ্ধারকাজ শুরু হবে এবং বিকল্প পথে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, প্রবল বৃষ্টিতে বর্তমানে জলদাপাড়ার অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন। তিস্তা, তোর্সা, ও হলং নদী উপচে পড়ছে। ইতিমধ্যেই জল ঢুকে পড়েছে সংলগ্ন বনাঞ্চলে, যার ফলে বিপদের মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণও। জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, ডিএফও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, নদী ও সেতুর আশেপাশে পর্যটক ও স্থানীয়দের না যেতে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গে আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা।

প্রসঙ্গত, মহালয়ার ঠিক আগেই এক রাতের টানা বৃষ্টিতে কার্যত জলের তলায় চলে গিয়েছিল মহানগর। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল শহুরে জীবনের ব্যস্ততা। রাস্তার জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১০ জনের। বিগত চার দশক পরে এমন ভয়াবহ দুর্যোগের সাক্ষী থাকল কলকাতা। তবে উত্তরে শনিবার রাতের বৃষ্টি কলকাতার বৃষ্টির স্মৃতিকে উস্কে আরও দুই ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। এই ক্ষত সারিয়ে পাহাড় আবার কবে প্রাণবন্ত হয়, তার অপেক্ষাতেই থাকবে গোটা বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *