কুকি বিমানকর্মীর শেষকৃত্যে অনিশ্চয়তা

Spread the love

কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল শান্তি ফেরাতে। কিন্তু, আহমেদাবাদে দুই ফুটফুটে রাজকন্যার মতো চেহারার বিমানকর্মীর মৃত্যুশোক মিলিয়ে দিয়েছিল দীর্ঘদিনের কুকি-মেইতেই বিবাদকে। গত ১২ জুন আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন একজন কুকি, অন্যজন মেইতেই সম্প্রদায়ের বিমানকর্মী। যাঁদের অকালে চলে যাওয়া গোটা মণিপুরের হৃদয় ভিজিয়ে দিয়েছিল চোখের জলে। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের ক্ষতবিক্ষত মন ভুলিয়ে দিতে পারেনি সেই বিবাদকে।

গত বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা এক মুহূর্তে দুই যুযুধান গোষ্ঠীর রাহু কাটিয়ে দিয়েছিল। শোক ও বেদনা তাদের এক করে তুলেছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া থেকে কুকি-জো পরিবারের মেয়ে লামনুনথিয়েম সিংসন এবং মেইতেই কন্যা এনগাংথোই শর্মা কোংব্রাইলাকপামের ঘরে প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন নিশ্চিত জানা গেল যে, দুর্ঘটনায় কোনও বিমানকর্মী বেঁচে নেই, তখন মাথার উপরে যেন পাহাড় ভেঙে পড়ে।তারপরেও আরও বড় কিছু অপেক্ষা করেছিল তাঁদের জন্য তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। জানা গেছে,আহমেদাবাদ কর্তৃপক্ষ যখন দুই বিমানকর্মীর মৃতদেহ শনাক্ত করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে, তখনও মণিপুরে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং মেইতেই ও কুকি নেতাদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে।এখন সকলের একটাই প্রশ্ন, কুকি-জো কন্যা লামনুনথিয়েম সিংসনের কফিনবন্দি দেহ কোথায় নিয়ে আসা হবে?

আসলে কুকি-জোরা (মৃত্যু ভয়ে) ইম্ফলে প্রবেশ করেন না। এই আবহে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এবং কর্তৃপক্ষ লামনুনথিয়েমের পরিবারকে জানিয়েছেন, বিমানকর্মীরা মৃতদেহ ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে নিতে চাইলে, তারা ইম্ফল থেকে কাংপোকপি পর্যন্ত কনভয়ের ব্যবস্থা করবেন।বস্তুত, লামনুনথিয়েমের পরিবার ইম্ফলের নিউ লাম্বুলান এলাকায় থাকত, কিন্তু সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর পালিয়ে পার্বত্য জেলা কাংপোপকিতে আশ্রয় নেয়।এদিকে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে মণিপুর সরকার জানিয়েছে, তারা এয়ার ইন্ডিয়া এবং টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তাদের আশ্বস্ত করেছে যে তারা ইম্ফল বিমানবন্দরে দুই বিমানকর্মীর মৃতদেহ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। শেষকৃত্য এবং অন্যান্য ব্যবস্থা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শোকাহত পরিবারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (কেএসও) সদস্যরা জানিয়েছেন যে আহমেদাবাদ কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেনি।এই আবহে মণিপুর পুলিশ প্রধান রাজীব সিং-সহ শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা সোমবার ফোনে কুকি বিমানকর্মীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।তবে কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন, কাংপোকপি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কে শোংরেং বলেন, ‘কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ইম্ফল নিরাপদ নয়। আমরা সকলেই জানি গত দুই বছরে আমাদের সেখানকার লোকদের সঙ্গে কী ঘটেছে।’ এরমধ্যেই ইম্ফলের সবচেয়ে প্রভাবশালী মেইতেই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি, সিওসিওএমআই সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসে জাতিগত সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে, মণিপুরে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, মেইতেই গোষ্ঠীগুলি বজায় রেখেছে যে রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতা কোনও শান্তি প্রক্রিয়ায় আপোষযোগ্য নয়, অন্যদিকে কুকি-জো সংগঠনগুলি জোর দিয়ে বলেছে যে সংকট সমাধানের একমাত্র সমাধান হ’ল তারা যেখানে বাস করে সেখানে পার্বত্য জেলাগুলির জন্য একটি পৃথক প্রশাসন তৈরি করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *