কুকুরের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট

Spread the love

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা ও ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগের মাঝেই বিহারে ফের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য। পাটনার মসৌড়ি সাব-ডিভিশনের একটি দফতর থেকে জারি হয়েছে রেসিডেন্স সার্টিফিকেট–তাও আবার এক কুকুরের নামে! ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে কুকুরের ছবি সম্বলিত ওই শংসাপত্রের ছবি।

সরকারি ওই নথি অনুযায়ী, বাসিন্দার নাম ‘ডগ বাবু।’ আর আপত্তিকর শব্দে লেখা হয়েছে ‘ডগ বাবু’র পিতামাতার নাম। শংসাপত্রে পিতার নাম লেখা হয়েছে ‘কুত্তা বাবু’, মাতার নাম ‘কুত্তিয়া দেবী।’ পুরো ঠিকানাও দেওয়া হয়েছে-পাটনা জেলার মসৌড়ির কাঞ্জোলি গ্রাম।এতে মসৌরির কৌলিচক ওয়ার্ড-১৫-এর একটি ঠিকানাও ছিল। বিহার সরকারের সিলমোহরও রয়েছে ওই শংসাপত্রে। নীচে রয়েছে আঞ্চলিক অফিসের রাজস্ব আধিকারিক মুরারী চৌহানের ডিজিটাল স্বাক্ষর।এমনকী ওই নথিতে কুকুরটির ছবি পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে, যা একটি ল্যাব্রাডর জাতের কুকুরের ছবি বলেই মনে করা হচ্ছে।আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভোটমুখী বিহারে।এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, এটি কী ভাবে সম্ভব? বিহার সরকার বা সংশ্লিষ্ট দফতর কীভাবে এই ধরণের তথ্য যাচাই না করেই একটি সরকারি শংসাপত্র জারি করতে পারল?

ইতিমধ্যেই ওই সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে।কিন্তু বিষয়টি সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি-জেডিইউ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে। বৈধ ভোটারদের নাম ছেঁটে ফেলে অবৈধ ভাবে ভুয়ো ভোটারদের নাম ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি। এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিহারের পূর্ণিয়ার সাংসদ পাপ্পু যাদব।ওই শংসাপত্রের ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘কুকর স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র পাচ্ছে। অথচ মানুষজনকে এই শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। এটাই আমার মহান ভারত।’ এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন তিনি।অন্যদিকে কংগ্রেস লিখেছে, ‘কুকুরটি এসে বিজেপিকে ভোট দেবে। সম্ভবত তারা ডগ বাবুকে প্রার্থী করবে এবং সমস্ত বিজেপি কর্মীরাও তাকে ভোট দেবে। এটি বিজেপির কারসাজি, যারা অপরাধী সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করছে। আদালতগুলি এর প্রত্যক্ষদর্শী এবং তারা নীরবতা থেকে গণতন্ত্রের ধ্বংসযজ্ঞকে আশীর্বাদ করছে।’

এই খুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের নাম বাদ দিয়ে কুকুরের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। এসআইআরের ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করছে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে কুকুরের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট ইস্যু করে ফেক ভোটার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। যাতে ভোট লুট করে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে কমিশন।’ একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির ‘তল্পিবাহক’ বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক।

এদিকে, বিতর্কের মুখে পাটনার জেলাশাসক ত্যাগরাজন এসএম বিষয়টিকে ‘গুরুতর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত কর্মী এবং আধিকারিকের গাফিলতির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের সাসপেন্ড করা হবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল করার সাহস কেউ পাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় থানায় আবেদনকারী, কম্পিউটার অপারেটর এবং সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে। সাব-ডিভিশনাল অফিসারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *