কুয়ালালামপুরে বিরোধী জোটের বিক্ষোভ

Spread the love

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। বিরোধী জোট পেরিকাতান ন্যাশনালের (পিএন) নেতৃত্বে আয়োজিত ‘তুঁউরুন আনোয়ার’ র‍্যালি নামে পরিচিত এই সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

দেশটিতে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগ এবং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রশাসন ১৮ মাস ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিশেষ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, স্থানীয় চালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারা, কৃষকদের দুর্দশা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে।

এছাড়া, কর্মচারী ভবিষ্যত তহবিল (ইপিএফ) থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমতি ফিরিয়ে আনা, জনস্বাস্থ্য কর্মীদের অধিকার রক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রভাব কমানোর মতো দাবিগুলো বিক্ষোভকারীদের মূল এজেন্ডায় ছিল।

এই বিক্ষোভের আয়োজনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পাস এর যুব শাখা, যা পেরিকাতান ন্যাশনাল জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। র‍্যালির কয়েক দিন আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রচার শুরু হয় এবং বিভিন্ন পোস্টার ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেবে, তবে আয়োজকদের দাবি অনুযায়ী কয়েক লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণের লক্ষ্য ছিল।

বিক্ষোভকারীরা চারটি প্রধান স্থানে যেমন – মসজিদ নেগারা, সোগো মার্কেট প্রাঙ্গণ, মসজিদ জামেক এবং পাসার সেনি থেকে জড়ো হয়ে দাতারাণ মেরদেকা অভিমুখে যাত্রা করে। দাতারাণ মেরদেকা বহু সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। মালয়েশিয়ার পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতি সম্মান জানিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।

এদিকে, পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, প্রায় ২ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। যদিও সড়ক অবরোধের কোনো পরিকল্পনা ছিল না, পুলিশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে, সরকারি কর্মচারীদের এই বিক্ষোভে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং সরকারের প্রধান সচিব তান শ্রী শামসুল আজরি আবু বকর স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এটি ‘রাজা ও দেশের প্রতি আনুগত্য’ নীতির পরিপন্থি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা অন্তত তার প্রশাসনের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।

তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়ান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জেমস চিন বলেন, ‘মানুষ সত্যিই ক্ষুব্ধ কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় সবাইকে ভোগাচ্ছে।’ বিরোধী দলগুলো এই বিক্ষোভকে তাদের শক্তি প্রদর্শনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *