কেন বাড়ির পিছনে আলাদা সিমেন্টের পিচ করেছিলেন বৈভবের বাবা?

Spread the love

সোমবার সন্ধ্যায়, যখন বৈভব সূর্যবংশী জয়পুরের সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ১১৭৭ কিমি দূরে বিহারের সমস্তিপুর জেলায় তাঁর বাড়িতে ভিড় করছিলেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বৈভবের বন্ধুরা রাস্তায় আতশবাজি ফাটিয়ে উৎসব শুরু করে দিয়েছিলে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময়ে বৈভবের বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী বলেন, ‘দীপাবলি যেন ছয় মাস আগেই চলে এসেছে’। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বৈভব সূর্যবংশী আইপিএলের একটি ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে রাজস্থান রয়্যালসকে আট উইকেটে জয় এনে দিয়ে পুরুষদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কনিষ্ঠ শতরানকারী হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। শুভমন গিল, সরফরাজ খান, পৃথ্বী শ, এবং অভিষেক শর্মার মতো বৈভবও তাঁর বাবার অপূর্ণ ক্রিকেট স্বপ্ন পূরণ করছেন।

সঞ্জীব নিজেও একজন ক্রিকেটপ্রেমী ছিলেন, যেমন ছিলেন লখবিন্দর গিল, নওশাদ খান, পঙ্কজ শ ও রাজকুমার শর্মা। ২০২০-২১ সালের বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে যখন শুভমন গিল গাব্বায় ৯১ রানের সাহসী ইনিংস খেলেছিলেন, তখন সঞ্জীব সংবাদপত্রে পড়েন যে শুভমনের বাবা ফাজিলকা, পঞ্জাবে সিমেন্ট পিচে ছেলেকে অনুশীলন করাতেন।

বৈভব সূর্যবংশীর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীও নিজের বাড়ির পিছনে একটি সিমেন্ট পিচ তৈরি করেন, এবং ভাগ্যচক্রে বৈভবের ঝড়ো ইনিংস সেই শুভমন গিলের দল গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধেই এল। বৈভবের বাবা সঞ্জীব বলেন, ‘বৈভব মাত্র ৩৫ বলে অসাধারণ ইনিংস খেলে রাজস্থান রয়্যালসকে ম্যাচ জেতান। আমরা খুব খুশি। বাড়ির পরিবেশ এখন যেন উৎসবমুখর।’

সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারে বৈভব সৌভাগ্যবান ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (NCA) ভিভিএস লক্ষ্মণের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে, এবং রাজস্থান রয়্যালসে রাহুল দ্রাবিড়ের তত্ত্বাবধানে অনুশীলনের সুযোগ পেয়ে। লক্ষ্মণই প্রথম রাহুল দ্রাবিড়কে বৈভবের নাম সুপারিশ করেছিলেন।

বৈভবের কোচ মণীশ ওঝা বলেন, ‘লক্ষ্মণ স্যার গত দুই বছর ধরে ওকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর এখন দ্রাবিড় স্যার নিজেই ওকে নিজের ছায়ায় রেখেছেন।’ মাত্র ১৩ বছর বয়সে আইপিএলের মতো বড় মঞ্চে চুক্তি পেয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বৈভব। তাঁর বাবা সঞ্জীব এই কৃতিত্ব রাজস্থান রয়্যালসের ম্যানেজমেন্টকেই দেন।

সঞ্জীব জানান, ‘হ্যাঁ, ও কঠোর পরিশ্রম করেছে, কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস টিম ম্যানেজমেন্টের অবদানও অনেক। গত তিন-চার মাস ধরে রাহুল দ্রাবিড় ও বিক্রম রাঠৌররা ওর উপর কাজ করেছেন—আজ তারই ফল মিলছে।’ রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর বৈভবকে ‘বিশেষ প্রতিভা’ বলে আখ্যায়িত করে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন।

ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের রাঠৌর বলেন, ‘ও একটা অসাধারণ প্রতিভা। ওর টেকনিক্যাল ডাউনসুইং দুর্দান্ত, যেটা ওকে এই রকম পাওয়ার জেনারেট করতে সাহায্য করে। আজ ও সকলকে দেখিয়ে দিল, ও কতটা ভালো খেলোয়াড়।’

রাঠৌর আরও বলেন, ‘মাত্র ১৪ বছর বয়সে এমন ইনিংস খেলা নিজেই এক অসাধারণ ব্যাপার। আমরা ওকে চার মাস আগে ট্রায়ালে প্রথম দেখি, তখনই বুঝি, তার মধ্যে কিছু বিশেষ রয়েছে। তারপর থেকে আমাদের কাজ ছিল ওকে ঠিকভাবে গড়ে তোলা। ক্রেডিট ওর—ও নিজের ধৈর্য বজায় রেখেছে, মানসিকভাবে স্থির থেকেছে এবং আজ অসাধারণ ইনিংস খেলেছে।’

১৪ বছর বয়সে বৈভব সূর্যবংশী আইপিএলে শতরান করা সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে উঠলেন। জয়পুরে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৫ বলে শতরান করে তিনি আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ভারতীয় সেঞ্চুরিয়ান হয়েছেন। সমস্তিপুরে বৈভবের কাকা রাজীব কুমার সূর্যবংশী বলেন, ‘ও যা করেছে, তা আইপিএলের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবজনক ও অসাধারণ। এটি আমাদের এলাকার ও বিহারবাসীর জন্য গর্বের ও সম্মানের বিষয়… ও ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জন করবে। এটি আমাদের জন্য বিশাল সম্মানের ব্যাপার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *