জাল পাসপোর্ট মামলার তদন্তে ফের তৎপর হলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার খড়দায় নর্মদা আবাসনে তল্লাশি চালায় ইডির একটি বিশেষ দল। সূত্রের খবর, ওই আবাসনের এক ফ্ল্যাটে বাস করেন মনোজ কুমার গুপ্তা নামে এক পরিবহণ ব্যবসায়ী। তাঁর বাসভবনেই প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলে। ইডির সন্দেহ, জাল পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গে মনোজ গুপ্তার সরাসরি যোগাযোগ থাকতে পারে।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেই বিরাটি থেকে আজাদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনিই এই মামলার মূল সূত্র। প্রায় দশ থেকে বারো বছর আগে বাংলাদেশ হয়ে আজাদ মল্লিক পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেন। এরপর ভুয়ো নথি ব্যবহার করে নিজের নামে জাল পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করেন তিনি। তদন্তকারীদের অনুমান, তিনি একা নন, এই গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে একটি সংগঠিত চক্র। সেই চক্রই জাল নথি বানিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে লোক ঢোকানো, পাচার এবং অর্থ লেনদেনের মতো কাজ চালাত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজাদ মল্লিককে জেরা করেই একের পর এক নতুন তথ্যের হদিস পায় ইডি। তাঁর বয়ানে উঠে আসে আরও কয়েকজনের নাম। সেই সূত্র ধরেই ইডি উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক জায়গায় অভিযান চালায়। এই অভিযানেই নদিয়ার শিবপুর থেকে ধরা পড়ে ইন্দুভূষণ হালদার নামে এক ব্যক্তি। চাকদহে তাঁর একটি সাইবার ক্যাফে থেকেই নাকি জাল পাসপোর্ট তৈরি করা হত বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের। এরপর তদন্তের জাল এসে পড়ে আরেকজনের দিকে বিপ্লব সরকার। ইডি মনে করছে, এই চক্রের আর্থিক যোগসূত্র ও লেনদেনের দিকটি দেখাশোনা করতেন তিনিই। তাই সোমবার থেকেই তাঁর নাম আসে তদন্তের নজরে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খড়দায় তাঁর সহযোগী হিসেবে পরিচিত মনোজ গুপ্তার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ইডি উদ্ধার করে একাধিক নথি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। সেগুলি এখন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

ইডির প্রাথমিক ধারণা, এই জাল পাসপোর্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সীমান্ত পারাপারের পাশাপাশি বহু আর্থিক জালিয়াতি চলছিল। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর, পাচার ও ভুয়ো পরিচয়ে ভ্রমণের মতো কর্মকাণ্ড এই চক্রের মাধ্যমেই পরিচালিত হত। তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই চক্রের শিকড় কেবল উত্তর ২৪ পরগনা বা নদিয়াতেই নয়, বিস্তৃত হয়েছে রাজ্যের আরও কয়েকটি জেলায়।