অনেক আফগান নাগরিকদের মতো কাজের সন্ধানে ইরান গিয়েছিলেন এনায়েতুল্লাহ আসঘারি। তবে গত মাসে ইরান-ইসরাইলের ১২ দিনের সংঘাতের পরিণতি তাকেও ভোগ করতে হচ্ছে। দুই দেশের সংঘাতের কারণে এমনিতেই ইরানের নির্মাণখাতে কাজ কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছিলেন অভিবাসী আফগানিরা। তার ওপর আসঘারির মতো হাজারো আফগানিকে গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত করেছে তেহরান।
৩৫ বছর বয়সি আসঘারির মতো হাজার হাজার আফগানিকে গত কয়েকদিনে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ইরানের কর্তৃপক্ষ। এই পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ বলেছে, এরইমধ্যে মানবাধিকার সংকটে থাকা আফগানিস্তানে হুট করে হাজার হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠালে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
দেশে ফেরার পথে আসঘারি বলেন, ‘দেশে কোনো কাজ নেই। এমনকি থাকার মতো জায়গাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। পাওয়া গেলেও দেখা যাবে দাম অনেক বেশি।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের সময় প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান। এর আগে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার।
এ বিষয়ে ইরানের সরকারি মুখপাত্র ফতেমেহ মোহাজরানী মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সব সময় অতিথিদের ভালো রাখার চেষ্টা করেছি, তবে জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার এবং স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ নাগরিকদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, আফগানিদের বিতাড়ন নয়, বরং নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। এ বিষয়ে আফগানিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে থেকেই তেহরান জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে বিদেশিদের, বিশেষ করে আফগানদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় বাড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন মানবিক সংস্থার কর্মকর্তা ও ফেরত পাঠানো আফগান নাগরিকরা।

২০২২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, ইরানে বসবাসরত আফগান নাগরিকদের মধ্যে আনুমানিক ২৬ লাখের বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
আসঘারি বলেন, ‘আমাদের গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হতো। তারা আমাদের এজন্য সন্দেহ করতো। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ ও পুলিশে কোনো ফারাক ছিল না। তারা মনে করতো, আফগানিরা ইরানের প্রধান শত্রু, আমরা নাকি ভেতর থেকে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি।’