চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় ‘র’ দেখতে পায় বাংলাদেশি কট্টরপন্থীরা

Spread the love

বাংলাদেশের লালমনিরহাটে সম্প্রতি পরেশ চন্দ্র শীল এবং বিষ্ণু চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২২ জুন লালমনিরহাটের পাগলার মোড়ে অবস্থিত তাঁদের দোকানে হামলা চালায় একদল ইসলামি কট্টরপন্থী। এরপর তাদের মারপিট করা হয়। সেই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। এদিকে বাংলাদেশি ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন এবার দাবি করলেন, এই ঘটনার পর থেকে নাকি সেখানে থানার ওসিকে ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

বিদেশে বসবাসরত এই বাংলাদেশির আজব দাবি, লালমনিরহাটের ঘটনায় নাকি ভারতীয় সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা র’এর যোগ আছে। এদিকে বাংলাদেশিদের ইসকনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিতে তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনায় ধৃত বাবা এবং ছেলেরা ইসকনের ভক্ত। এমনকী এই বাবা-ছেলেকে ‘র এজেন্ট’ অভিহিত করেছেন ইলিয়াস হোসেন। এই ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আমেরিকাতে রয়েছে প্রতারণার অভিযোগ।

এদিকে এই ঘটনায় শীল পরিবারের অভিযোগ, ধর্ম অবমাননার মিথ্যে অভিযোগ তুলে পরেশ চন্দ্র শীল এবং বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পরিকল্পিতভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বিষ্ণুর স্ত্রী রানি শীল দাবি করেছেন, ঝামেলা শুরু হয়েছিল টাকা নিয়ে। পরে সেখান থেকে ধর্ম অবমাননার ভুয়ো দাবি রটিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁদের সেলুনে হামলা চালানো হয়েছিল।

মামলায় সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় একটি মসজিদের ধর্মীয় পাঠ করা মহম্মদ জুবায়ের হোসেন। তিনি নিজে অবশ্য দাবি করেন, তিনি প্রত্যক্ষদর্শী নন। এদিকে মামলাকারী মসজিদের ইমাম নিজেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। এর থেকেই ‘ভুয়ো অভিযোগের’ দাবির বিষয়টি আরও জোরদার হচ্ছে। তবে তদন্ত শুরুর আগেই এক পুলিশ অফিসার এই বিষয়ে যা সব বলেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক চরমে।

বাংলাদেশি সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি নুর নবির বক্তব্য। উত্তেজিত ইসলামি কট্টরপন্থীদের উদ্দেশে থানার বাইরে এই বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। সেই বক্তব্যে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমারও বুকেও আগুন লাগিগেছে। আপনাদের মতো চোখে জল আমারও এসেছে। কীভাবে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এই দেশে করে! আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিলাম। আমি তাদের যখন অ্যারেস্ট করেছি। বাংলাদেশে এমন মামলা তাদের দেব, নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়।’


এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাজু মিঞা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তদন্ত শুরুর আগেই থানার ওসি কীভাবে ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে দিলেন যে অভিযুক্তদের ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করা হবে? এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বহু জায়গায় ধর্ম অবমাননার ভুয়ো অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এসব ঘটনায় পরে আর অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *