ছেলের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েক সপ্তাহের বিতর্ক, সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী লুভসান্নামস্রেইন ওয়ুন-এরদেন।মঙ্গোলিয়ার সংসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্যে গত সোমবার (২ জুন) অনুষ্ঠিতি এক আস্থা ভোটে হেরে যান ওয়ুন-এরদেন। পরদিন মঙ্গলবার (৩ জুন) পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
ওয়ুন এরদেনের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পুরনো। সম্প্রতি তার ছেলে ও তার বান্ধবীর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে তাদের বিলাসী জীবনযাপনের চিত্র উঠে আসে। যা জনরোষ উসকে দেয়।
এমনকি রাজধানী উলানবাটোরে বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবার কীভাবে এমন বিলাসী জীবনযাপন করে। দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার পার্লামেন্টে আস্থা ভোট হয়।
ভোটে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৪৪ জন প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন এরদেনের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে পড়ে ৩৮ ভোট। ক্ষমতায় থাকতে সংসদের ১২৬ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে ৬৪ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল।

পরদিন পার্লামেন্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন। বলেন, ‘মহামারি, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকটের মতো কঠিন সময়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা আমার জন্য সম্মানের ছিল।’
তবে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা ওয়ুন এরদেন তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত সোমবার ভোটের আগে সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি সরকার পতনের জন্য ‘সংগঠিত প্রচারণা’ চালানোকে দায়ী করেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাকে ক্ষমতা থেকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কিন্তু তার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি সাংসদরা।
ওয়ুন এরদেন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর আসন গ্রহণ করেন। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফের নির্বাচিত হন তিনি। পদত্যাগ করলেও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন ওয়ুন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তার উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করা হবে।
উত্তর এশিয়ার স্থলবেষ্টিত গণতান্ত্রিক দেশটি কয়েক দশক ধরে গভীর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ওয়েন ক্ষমতায় আসার পর থেকে মঙ্গোলিয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে। গত বছর সরকারি স্বচ্ছতায় দেশটি ১৮০টি দেশের মধ্যে ১১৪তম স্থানে ছিল।
রাশিয়া ও চীনের মধ্যে অবস্থিত এক কালের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটিতে ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গণতন্ত্রের পথে পা বাড়ায়। তবে সেই পথে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। গত বছর মার্কিন আইনজীবীরা নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাতার বাতবোল্ডের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাজেয়াপ্ত করার চেষ্টা করেন।
অ্যাপার্টমেন্ট দুটি বাতবোল্ড কয়লা খনির অর্থ আত্মসাৎ করে কিনেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মঙ্গোলিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের ‘তৃতীয় প্রতিবেশী’ নীতি হিসেবে গণ্য করছে দেশটি।