শেষ পর্যন্ত জল্পনাই সত্যি হল। জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিল ঝাড়খণ্ডের দল ঝাড়খণ্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারি মোর্চা (জেএলকেএম)। রবিবার পুরুলিয়ার জয়পুরের ফরেস্ট মোড়ের গোবিন্দ স্টেডিয়ামে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে দলের সুপ্রিমো ও ঝাড়খণ্ডের ডুমরির বিধায়ক ‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতো ঘোষণা করলেন, আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের আসনগুলিতে তাঁর দল প্রার্থী দেবে। যদিও কোন কোন আসনে লড়বে, তা নিয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা।
মাহাতোর কথায়, দলে সমীক্ষা চলছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জঙ্গলমহলে দল লড়বে, এটা নিশ্চিত। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, পুরুলিয়ার জয়পুর ও ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে প্রার্থী দিতে পারে জেএলকেএম। রাজনৈতিক ঘোষণার পাশাপাশি এদিনের মঞ্চ থেকেই তিনি ফের উত্থাপন করলেন বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাবি। জানালেন, জল, জঙ্গল, জমির অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। একদিকে জঙ্গলমহল, আরেকদিকে বাংলার অন্য অংশ। কিন্তু জঙ্গলমহল বঞ্চিত। এটা কেন? এই প্রশ্ন তুলেই কার্যত শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ‘টাইগার’ মাহাতো। উল্লেখ্য, বাম আমলে থেকেই বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড গঠনের আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে জঙ্গলমহলে। একসময় শিবু সরেনের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এই দাবিতে সরব ছিল। পরে সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে আসেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা ও পরে আজসুতে যোগ দিয়ে তিনিও একই দাবি তুলেছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে কুড়মি সমাজের একাংশের আস্থা সরে যায় তাঁর দিক থেকে।

সেই জায়গাটিই এখন দখল করেছেন জয়রাম মাহাতো। ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী বাংলা অঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছে দ্রুত। জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনতার একাংশ এখন তাঁকেই নিজেদের প্রতিনিধি মনে করছেন। রবিবারের সমাবেশে সেই আস্থা চোখে পড়ল স্পষ্টভাবে, ভিড়ের উত্তেজনায় কেউ কেউ তো মাহাতোকে কাঁধে তুলে মঞ্চে উঠিয়ে দিলেন। অনেকেই মনে করছেন, মাহাতোর এই ঘোষণা জঙ্গলমহলের ভোটরাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।