টাইফুন কালমায়েগি আঘাত হানার আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে।এএফপির প্রতিবেদন মতে, ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলে গত এক সপ্তাহে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে, নদীর তীর ভেঙে গেছে এবং হিউ, দা নাং, লাম ডং এবং কোয়াং ত্রির মতো প্রদেশগুলোতে ঐতিহাসিক স্থানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একদিনে কিছু এলাকায় ১.৭ মিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশটির আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বন্যার প্রায় ৮০ হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে, ১০ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসল ধ্বংস হয়েছে এবং ৬৮ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু মারা গেছে। ভূমিধসের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহের রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার (২ নভেম্বর) এই সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। এদিকে দেশটির এই দুর্যোগ এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে টাইফুন কালমায়েগি। যা এরই মধ্যে ফিলিপিন্সে আঘাত হেনে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদন মতে, সোমবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতের কিছু আগে ফিলিপিন্সের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে টাইফুন কালমায়েগি। এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টাইফুনটি সেবু ও নেগরোস দ্বীপ অতিক্রম করে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। দমকা হাওয়া ছিল ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় ফিলিপিন্সি কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে হাজারো বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। ফিলিপিন্সে আঘাত হানা চলতি বছরের ২০তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়টি এখন আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরের দিকে দ্বীপপুঞ্জের দেশটির পশ্চিমাঞ্চল থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে সরে যেতে থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এরপর আগামী শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ভোরে এটি ভিয়েতনামে ১৬৬ কিমি/ঘন্টা (১০০ মাইল) বেগে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এএফপির প্রতিবেদন মতে, টাইফুন কালমায়েগি ফিলিপিন্সে তাণ্ডব চালিয়েছে। বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে দেখা দিয়েছে বন্যা। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ভেসে গেছে গাড়ি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা।
এই দুর্যোগের কারণে এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছে। সেবুর তথ্য কর্মকর্তা রন রামোস এএফপিকে ফোনে জানিয়েছেন, অনেক মানুষ ছাদে আটকা পড়ে উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন। এমনকি কিছু আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি ঢুকে গেছে।
সেবু সিটির বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি ডন ডেল রোসারিও জানান, তিনি পরিবারসহ উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। জল হঠাৎ করেই উঠতে শুরু করে। রাত ৩টার দিকে বন্যা শুরু হয়, আর ৪টার মধ্যে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেউ ঘর থেকে বের হতেও পারেনি।