ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই সপ্তাহ বিলম্ব ইসরাইলে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। শনিবার (২১ জুন) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ইসরাইলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ইরানের হামলায় মার্কিন সম্পৃক্ততার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
যুক্তি দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট ইসরাইলের সাথে হামলায় যোগ দিলে এই সংঘাত দ্রুত শেষ হবে। এটি পারমাণবিক ইরানের অস্তিত্বের হুমকি দূর করতে ইসরাইলকে সহায়তা করবে।
এই সপ্তাহের শুরুতে সিএনএনকে সাবেক ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানান,
‘আমরা বিশ্বাস করি যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে এটি নিশ্চিত করতে যে, এই অঞ্চলটি ইতিবাচক দিকে এগিয়ে চলেছে এবং বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরান থেকে মুক্ত করা হয়েছে।’
নভেম্বরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাকে বরখাস্ত করার আগে গ্যালান্ট ইরান অভিযানের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন সময়সীমার পর, ইসরাইলের রাজনৈতিক নেতারা তাদের বক্তব্যে সতর্ক হচ্ছেন, তারা চান না, প্রেসিডেন্টকে ঠিক সেই ধরনের মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে ঠেলে দিতে যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে এড়াতে চেয়েছিলেন।

ট্রাম্প যখন ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযানে যোগ দেবেন কিনা তা বিবেচনা করছেন, তখন সিএনএন দেশটির নেতৃত্ব, সংঘাতের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটিকে কীভাবে দেখে তা আরও ভালভাবে বুঝতে অর্ধ ডজন ইসরাইলি কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। বেশিরভাগই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন।
ইসরাইলের যুক্তি, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে তা সংঘাতের প্রকৃতি নাটকীয়ভাবে বদলে দেবে, যার মধ্যে রয়েছে ইরানের ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে আঘাত হানার সম্ভাবনা অনেক বেশি বাড়বে। যা তেহরানের দক্ষিণে একটি পাহাড়ের গভীরে লুকিয়ে রয়েছে।
এই ধরনের সিদ্ধান্তমূলক হামলার জন্য সম্ভবত ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বাস্টার বোমা প্রয়োজন হবে যা কেবল মার্কিন বোমারু বিমান বহন করবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে ইসরাইলি সাবেক কনসাল জেনারেল ইয়াকি দায়ান বলেন, ‘একটি বোঝাপড়া আছে যে, ইসরাইলিরা যেভাবেই হোক ফোরডোতে হামলার পক্ষে যাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই হামলা অনেক বেশি খারাপ হবে।’
ইরানে ইসরাইলি হামলার প্রথম সপ্তাহের পর, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে অভিযান কতদূর এগিয়ে যাবে। এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প কী করবেন তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ট্রাম্পের মেগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) বেসের ( ঘাঁটি) মধ্যে, যারা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন যুদ্ধে মার্কিন সম্পৃক্ততার পক্ষে এবং বিপক্ষে কথা বলছেন তাদেরকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে ইসরাইল। তাদের মতামত বিবেচনা করছে।
এদকে, জনসমক্ষে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন। বুধবার, ইসরাইলি নেতা বলেছিলেন যে দুজনের মধ্যে প্রায়ই কথা হয়। একটি পূর্ব-রেকর্ড করা ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি ট্রাম্প তার সমর্থনের জন্য আছেন।’
কিন্তু ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী ইসরায়েলপন্থি অবস্থান থেকে সরে এসেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ইরানের সাথে আলোচনা, হুতিদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং ইসরাইলকে এড়িয়ে গিয়ে অঞ্চলে একটি সফর করা।
তারপরও ইসরাইল ইরানে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে দুই সরকার একটি চলমান সংলাপ বজায় রেখেছে। ইয়াকি দায়ান বলেন যে নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের মধ্যে সমন্বয় ‘মানুষের ধারণার চেয়ে অনেক ভালো।’ তবে স্বীকার করেন যে ট্রাম্প একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেন, শুধুমাত্র একটি ছোট বৃত্তের উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করার পরে।