গাজায় সাহায্য বিতরণ কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটির ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্ট বলে অভিযোগ করেন ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা।
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটিতে সাহায্য নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জেহাদ-আল আসা একজন। তিনি বুধবার (২৯ মে) ভোরে তার পরিবারের জন্য খাবার আনতে মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহর তাঁবু ছেড়ে ক্লান্তিকর এক যাত্রা শুরু করেন।
তার গন্তব্য ছিল গাজার দক্ষিণে রাফাহতে ওই সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রটি, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত।
জেহাদ ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান, মূলত তার গর্ভবতী স্ত্রী এবং দুই ক্ষুধার্ত কন্যার খাবার সংগ্রহের জন্য।
ইসরাইলের মাসব্যাপী অবরোধের কারণে গাজা জুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর ওই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটি ছিল তার একমাত্র আশা।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত এই সংগঠনটিকে ঘিরে আগে থেকেই বিতর্ক ছিল। রোববার এর নিজস্ব প্রধান পদত্যাগ করেন। তার অভিযোগ এই সংগঠনটি মানবতা, নিরপেক্ষতা, এবং স্বাধীনতার মানবিক নীতিগুলো মেনে চলতে পারে না।
বৃহস্পতিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সংগঠনটির অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন ত্রাণ কার্যক্রমকে ঘিরে বিশৃঙ্খলায় কমপক্ষে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষ খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে, ৯০ মিনিট হাঁটার পর, ৩১ বছর বয়সি জেহাদ যখন ওই কেন্দ্রে পৌঁছান তখন সেখানে হাজার হাজার মানুষ ছিলো। বিতরণ কেন্দ্রের লোহার গেটের কাছে পৌঁছানোর পর হঠাৎ করেই দরজাটি খুলে যায়।
জেহাদ আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভিড় বাড়তে থাকে – হাজার হাজার মানুষ। কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। মানুষ ছুটে যায় সেই উঠোনের দিকে যেখানে সাহায্যের বাক্সগুলো স্তূপ করে রাখা ছিল। এরপর ভিতরে রুমের দিকে ছুটে যায় যেখানে আরও সরবরাহ রাখা ছিল।’
জেহাদ বলেন, ‘এখানে চরম বিশৃঙ্খলা ছিল। মনে হচ্ছিল একটি সত্যিকারের সংগ্রাম। পুরুষ, নারী, শিশু, সবাই একসাথে ভিড় করেছে, যা পারছে তাই ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কোনো সারি নেই, কোনো ব্যবস্থা নেই। কেবল ক্ষুধার্ত মুখ এবং বিশৃঙ্খলা।’
তিনি জানান, একজনের পক্ষে যতটুকু নেয়া সম্ভব সে ততটুকুই নিয়েছে। কেউ কেউ দুটো বাক্স নিয়েছে। যার মধ্যে চিনি এবং রান্নার তেলের চাহিদাই ছিল বেশি।
জেহাদ বলেন, ‘সেখানে কোনো মানবতার চিহ্ন ছিল না। মানুষের চাপে আমি প্রায় পিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম।’
কিছু দূরেই, সশস্ত্র বিদেশি বাহিনী কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই অরাজকতা দেখছিল।
জেহাদ বলেন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম, আপনারা সাহায্য করছেন না দুর্ভিক্ষের তত্ত্বাবধান করছেন। আপনাদের চলে যাওয়া উচিত। আপনাদের এখানে প্রয়োজন নেই।’
জেহাদ বেশি কিছু নেননি বলে জানান। টুনার ক্যান, এক ব্যাগ চিনি, কিছু পাস্তা এবং মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এক প্যাকেট বিস্কুট। সেগুলো কাঁধে ঝুলিয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে বহন করে দীর্ঘ যাত্রা করে বাড়ি ফিরে আসেন।
আরও বেশি সময় থাকলে পদদলিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে; এমন ভয়ে তিনি তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন বলে জানান।