নিমকাঠ চুরি বিতর্কে আপাতত ইতি! ইতি টানল ওড়িশার বিজেপি সরকারই। কারণ, পুরীর নবেকলেবরে উদ্বৃত্ত হওয়া নিমকাঠ দিয়ে দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণ করা হয়েছে বলে যে হইচই শুরু হয়েছিল, তা যে ভিত্তিহীন, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, পুরীর বিগ্রহের জন্য বরাদ্দ এবং উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিয়ে মোটেও দিঘার মূর্তি নির্মাণ কর হয়নি। কারণ, কোনও নিমকাঠ চুরিই হয়নি!
উল্লেখ্য, দিঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনের পর নিমকাঠ চুরি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। মন্দিরেরই এক সেবায়েত টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাবি করে বসেন, ওই বিগ্রহ নাকি পুরী থেকে আনা নিমকাঠে তৈরি করা হয়েছে! বিষয়টি জানাজানি হতেই আসরে নামে ওড়িশার বিজেপি সরকার। অভিযোগ ওঠে, পুরীর নিমকাঠ চুরি করে দিঘার মন্দিরের জন্য মূর্তি বানানো হয়েছে! ওড়িশা সরকারের তরফে মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়।
সেই তদন্তে সামনে আসে, দিঘার মন্দিরের যে সেবায়েত নিমকাঠ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দাবিটি করেছিলেন, তিনি নাকি ‘মুখ ফসকে’ ওই কথা বলে ফেলেছিলেন! বাস্তবে, পুরীর নিমকাঠে দিঘার মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে – এমন কোনও তথ্যই নাকি তাঁর জানা নেই! অন্যদিকে, পুরীতে জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরির কাজ যাঁরা করেন, সেই মহারানা সেবকদের সঙ্গেও কথা বলা হয়। তাঁরাও জানান, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, নিমকাঠ চুরি নিয়ে প্রথম থেকেই বিজেপি নেতারা রাজনীতি করতে শুরু করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওড়িশার আইনমন্ত্রী হরিচন্দ্রন নিজে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। অন্যদিকে, বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সটান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘নিমকাঠ চুরি’র জন্য দায়ী করেন! বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়। তারই মধ্যে শ্রী চৈতন্যপ্রভুর মৃত্যুরহস্য নিয়ে নতুন করে তদন্তের দাবি তোলেন কুণাল ঘোষ!

এসবের মধ্যেই ওড়িশার আইমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পৌঁছে যায়, পুরী থেকে কোনও নিমকাঠ চুরি করে আনা হয়নি। দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ এমন কোনও চুরি করা নিমকাঠে নির্মাণ করা হয়নি। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর সোমবারই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয় ওড়িশা সরকার। তবে, এখনও দিঘার মন্দির নিয়ে তাদের কিছু দাবি এবং আপত্তি আছে। তাদের বক্তব্য, দিঘার মন্দির থেকে ‘ধাম’ শব্দটি বাদ দিতে হবে। কারণ, এতে ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত লাগছে। এ নিয়ে ওড়িশা সরকার লিখিতভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
আর, এই প্রেক্ষাপটে আজ (মঙ্গলবার – ৬ মে, ২০২৫) মুর্শিদাবাদে এই ঘটনা নিয়ে সরব হন মমতা। বলেন, ‘আমার নামে বদনাম করলেন কেন? তা হলে কত টাকা ফাইন হওয়া উচিত?… বলছে আমি নাকি নিমকাঠ চুরি করেছি। কান মুলে দেওয়া উচিত। বাংলায় কি নিমগাছ নেই? যাঁরা বলেছিলেন ওই কথা, তাঁরাই বলছেন ঠিক নয়।… আমরা অত ভিখারি নই। পকেটমারও নই, জোতদারও নই। আমরা পাহারাদার।’