জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত তোকারা দ্বীপপুঞ্জে দুই সপ্তাহে ৯০০ এর বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। এতে দ্বীপপুঞ্জটির বাসিন্দারা সারারাত জেগে উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছেন।সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (২ জুলাই) তোকারা দ্বীপপুঞ্জে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ জুন থেকে দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের সাগর ভূকম্পজনিত কারণে ‘খুব সক্রিয়’ হয়ে আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি এবং কোনো সুনামি সতর্কতাও জারি করা হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম এমবিসিকে দ্বীপপুঞ্জটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘুমাতেও ভয় লাগে। সব সময়ই কম্পন হচ্ছে, এমন মনে হয়।’
তোকারা অঞ্চলে অতীতে একাধিক ভূমিকম্প হয়েছে, তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যানযায়ী, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সংখ্যা অস্বাভাবিক।
জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর অন্যতম। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার (প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার) ওপর অবস্থানের কারণে এমনটি হয়েছে, এই অঞ্চলটিতে অনেকগুলো টেকটোনিক প্লেটের মিলন ঘটেছে। জাপানে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ ভূমিকম্প হয়।
তোকারা দ্বীপপুঞ্জের ১২ দ্বীপের মধ্যে সাতটিতে প্রায় ৭০০ মানুষ বসবাস করেন। এসব দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে কোনো হাসপাতাল নেই। সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল অন্তত ছয় ঘণ্টার ফেরি দূরত্বে প্রিফেকচারের রাজধানী কাগোশিমাতে।
আকুসেকিজিমা দ্বীপের বাসিন্দা চিজুকো আরিকাওয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভূমিকম্প আঘাত হানার আগে মহাসাগর থেকে অদ্ভুত একটি গর্জন শোনা যায়, বিশেষ করে রাতে। এটা ভয়াবহ।’ সাগরতীরের বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সি এই নারী আরও বলেন, ‘সবাই ক্লান্ত। আমরা সবাই চাই, এটা বন্ধ হোক।’

জাপানে আঘাত হানা বেশিরভাগ ভূমিকম্পই মৃদু, তবে কিছু ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়। যেমন ২০১১ সালে দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে আনা শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর বিশাল সুনামির সৃষ্টি করে, ওই ঘটনায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
জাপানের সরকারি কর্তৃপক্ষ কয়েক দশক ধরে ‘দ্য বিগ ওয়ান’ নামে পরিচিত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করে আসছে। সরকার আশঙ্কা করছে, এই ধরনের একটি ভূমিকম্পে ৩ লক্ষাধিক মানুষ মারা যেতে পারে। সরকার চলতি সপ্তাহেই নতুন বাধ নির্মাণ, আশ্রয় কেন্দ্র গঠনসহ আরও প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।