নাবালিকাকে ধর্ষণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ! ধৃত ৬৫-র বৃদ্ধ

Spread the love

বুধবার রাতে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক ১২ বছর বয়সি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল নৈনিতালের মল্লিতাল এলাকায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন গভীর রাত পর্যন্ত মসজিদে ভাঙচুর চালায় ও পাথর নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনায় মামলা রুজু করে উসমান নামে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে। এই ধৃতের বয়স ৬৫ বছর। মল্লিতাল ও তার আশেপাশে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশেষ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় লোকজন কোতোয়ালিতে পৌঁছে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও লোকজনকে মারধর শুরু করে। মাল্লিতাল এলাকার মসজিদে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোক পাথর নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে মৃদু শক্তি প্রয়োগ করে পুলিশ। ভিড় নিয়ন্ত্রণ আসে তারপরে। এদিকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালিতে নিয়ে আসে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ও একাধিক সংগঠন গভীর রাতে কোতোয়ালিতে পৌঁছে ফের গোলমাল শুরু করে।

নৈনিতালে অভিযুক্তকে কেন্দ্র করে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জনতার বচসা চলে। হট্টগোলের সময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে। এই আবহে হিংসা ছড়ায়। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনার পর মাল্লিতাল ও সংলগ্ন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ লাইন থেকে ফোর্স ডেকে স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ভিড় সামলাতে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে টহল বাড়িয়েছে। প্রশাসন ক্রমাগত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে নজরদারি দলকেও সক্রিয় করেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন এই কাজ করার। পুলিশের উপস্থিতি কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে এলাকাবাসীকে। যেকোও ধরনের সহিংসতা বা গুজব ঠেকাতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, কোতোয়ালিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল গভীর রাতে। প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং কিশোরের শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে সেই ব্যক্তির কঠোর শাস্তির দাবি জানান। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে রাতেই শহরে মিছিল বের করা হয়। স্লোগান দিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে কোতোয়ালী পৌঁছায়।

ঘটনার প্রতিবাদে জড়ো হওয়া জনতা কোতোয়ালিতে পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। কিছুক্ষণের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কিছু যুবক পুলিশের ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা করে। পরে সময়মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। জানা গিয়েছে, গরাতে বিক্ষোভের সময় নৈনিতালের এক রেস্তোরাঁর বেশ কয়েকজন কর্মীকে মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। তাদের গালিগালাজ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁর কাচের কাচ এমনকি কাউন্টারও লাঠি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। মালামাল রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। গাদিপাড়ো এলাকায় হামলার সময় একমাত্র পুলিশকর্মী একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের যুবককে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন, যাকে মারধর করা হচ্ছিল। কিন্তু তাকেও বিক্ষোভকারীদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। ওই যুবকের মাথায় লোহার ডান্ডা দিয়ে আঘাত করা হয়।

নৈনিতালের পুলিশ সুপার ডঃ জগদীশ চন্দ্র বলেন, ‘মাল্লিতাল এলাকায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত উসমানকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সাধারণ মানুষ। সকলের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুজব এড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *