নাবালিকার বিয়েতে ভোজ খেতে গেলেও ঠাঁই হতে পারে শ্রীঘরে

Spread the love

বাল্যবিবাহ রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। একাধিক প্রকল্প ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে নাবালিকাদের অল্প বয়সে বিয়ে রোখা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। তেমনই স্কুল, কলেজ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চলেছে প্রচার। তবে এসবের পরেও সমাজের নানা স্তরে এখনও বাল্যবিবাহের প্রবণতা একেবারে নির্মূল হয়নি। এবার সেই চেনা ছবি ভাঙতেই আরও কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে রাজ্য সরকার।

২০০৬ সালের ‘প্রোহিবিশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এর নিরিখে এবার রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাবালক-নাবালিকার বিয়েতে শুধু পাত্র-পাত্রী বা তাঁদের পরিবারই নয়, দায়ে পড়তে পারেন বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরাও। যাঁরা শুধু বিয়েবাড়িতে ভোজ খেতে যান, তাঁরাও আইনের আওতায় পড়তে পারেন। শুধু তাই নয়, আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি পুরোহিত, ক্যাটারার, বা অনুষ্ঠান – সংশ্লিষ্ট কোনও পরিষেবা প্রদানকারী সকলেই শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।

এমনকী জেল-জরিমানাও হতে পারে। এই আইন আগেই ছিল। বাল্যবিবাহ রুখতে এবার সেই আইনের কথাই মনে করাল রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে এই সংক্রান্ত গাইডলাইন। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের থেকে গত ১৫ মে একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে জেলার আধিকারিকদের কাছে। সেখানে এই আইন প্রয়োগের বিষয়টি আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলিও সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে

প্রসঙ্গত, পঞ্চম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, এখনও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বাঁকুড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার জেলায় বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া যায়। প্রশাসনের আধিকারিকদের মতে, এখনও বহু পরিবার মনে করেন, মেয়ের দ্রুত বিয়ে দিলে দায়মুক্ত হওয়া যায়। আর সেই মানসিকতা দেখা যায় নাবালিকার আত্মীয়-পরিজন বা প্রতিবেশীদের। তাঁরাও রীতিমতো বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন, অথচ কোনও প্রতিবাদ জানান না।

এমন পরিস্থিতিতেই রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন মনে করিয়ে দিচ্ছে নাবালিকার বিয়েতে আমন্ত্রিতরাও দায় এড়াতে পারেন না। কমিশনের তরফে জানানো হচ্ছে, শিশু সুরক্ষার বিষয়ে আয়োজিত প্রতিটি কর্মশালাতেই এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে এবং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদিয়া, বীরভূম, দার্জিলিং-সহ বিভিন্ন জেলায় এই সংক্রান্ত হোর্ডিং, পোস্টার লাগানো হয়েছে। সমাজমাধ্যমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার বাড়ি গিয়েও বোঝানো হচ্ছে নাবালিকার বিয়ে মানেই শুধু সামাজিক অন্যায় নয়, তা ফৌজদারি অপরাধও বটে। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, বুঝিয়ে কাজ না হলে কড়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *