নিমিশা প্রিয়া বাঁচাতে কি ‘ব্লাড মানি’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ইয়েমেনে?

Spread the love

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনা কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বিভিন্ন স্তরে। তবে সম্প্রতি সেই প্রচেষ্টায় ধাক্কা লেগেছে। নিমিশার জন্য লড়াই করে চলা এক সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম এই নিয়ে সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে কথা বলেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে। সেই সময়ই তিনি বলেন, মিডিয়া রিপোর্টে এমন ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে খুন হওয়া তালাল আবদো মেহদির পরিবার ন্যায়বিচারের চেয়ে অর্থের প্রতি বেশি আগ্রহী। তাই মেহেদির ভাই রেগে গিয়েছেন। তবে জেরোম বলেন, তিনি মেহেদির পরিবারের সাথে ফের সম্পর্ক মেরামতের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই বিষয়ে জেরোম বলেন, ‘এটা টাকার ব্যাপার না। টাকার কোনও লেনদেন হচ্ছে না। আমরা যদি আবদেলফাত্তাহ মেহদির (তালাল আবদো মেহেদির ভাই) জায়গায় না থাকতে পারি, তাহলে আমরা ক্ষমা চাইতে পারব না… ভারতে সবসময়ই মানুষ বলে আসছে যে ‘ব্লাড মানি’ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি সবাইকে একটা কথা বলি, এই শব্দটি ঠিক নয়। আমি আবদোর ভাইয়ের সাথে দুবার দেখা করেছি এবং বাবার সাথে একবার দেখা করেছি… আমরা সেই সময় নিমিশার জন্য করুণার আবেদন করেছি সেই সময়। আমি বলতে চাইছি, আমরা সেখানে গিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করতে পারি না যে ‘তুমি কত টাকা নেবে?’ এটা সম্পূর্ণ বিরক্তিকর… আমি জানি না ভারতের মানুষ এটা সম্পর্কে কীভাবে ভাবে।’

উল্লেখ্য, ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আবদো মেহদিকে হত্যার দায়ে ৩৭ বছর বয়সি নিমিশা প্রিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের কারাগারে রয়েছেন প্রিয়া। এই আবহে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। তারা এই কেসে সমস্ত বিকল্প খতিয়ে দেখেছে। এদিকে নিমিশার হাতে খুন হওয়া ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আবদো মেহদির পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম ভাস্করন।

নিমিশা প্রিয়া ছিলেন কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসে। এদিকে ২০১৬ সালে ইয়েমন থেকে যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সেই সময় ইয়েমেনের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখানেই তলাত আবদো মেহদির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়ার।

পরবর্তীতে প্রিয়াকে মেহদি একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কারণ ইয়েমেনে কোনও বিদেশি নাগরিক যদি ক্লিনিক খুলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় কারও সঙ্গে পার্টনারশিপে তা খুলতে হবে। সেই কারণেই মেহদিকে প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। এই আবহে ২০১৫ সালে মেহদির সাহায্যে ক্লিনিক খোলে প্রিয়া।

পরে মেহদির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রিয়ার। মেহদি প্রিয়ার থেকে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এর জেরে সেই দেশেই আটকে পড়েন তিনি। এদিকে প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিত মেহদি। এর জেরে মুসলিম দেশে পুলিশের সাহায্যও পায়নি প্রিয়া। নানান ভাবে প্রিয়াকে অত্যাচারও করত মেহদি। পরে কোনও ভাবে প্রিয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেহদির নামে।

২০১৬ সালে গ্রেফতারও হয় মেহদি। পরে অবশ্য সে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মেহদিকে ঘুম পাড়ানো ইনজেকশন দেয় প্রিয়া। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, লুকিয়ে রাখা পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। তবে সেই ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মেহদির। প্রিয়া এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে মেহদির দেহটি কেটে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে রেখে তারা পালায়।

পরে ২০১৮ সালে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। পরে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান নিমিশা প্রিয়া। ২০১৮ সাল থেকে আদালতে লড়াই চালাচ্ছিলেন প্রিয়া। অবশ্য সেদেশের শীর্ষ আদালতেও সেই মামলায় হেরে যান প্রিয়া। এই আবহে গত জানুয়ারি মাসেই প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন দিয়েছিলেন ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *