‘তেহরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত থাকা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অতিরিক্ত এবং আপত্তিকর।’ এমনটাই দাবি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা কোন চুক্তিতে পৌঁছবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি নিয়ে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র পর্যায়ে রয়েছে।এরমধ্যেই রোমে শনিবার দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম দফা আলোচনা হতে পারে। তার ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন খামেনেই।
ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই খামেনেই বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেব না। এটা অর্থহীন। ইরানের নিজস্ব নীতি ও পথ আছে এবং ইরান তা স্বাধীনভাবেই অনুসরণ করে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইরান কারুর অনুমতির অপেক্ষায় নেই। আমরা আমাদের রাস্তা নিজেরাই ঠিক করি।’ খামেনেই স্পষ্ট জানান, ‘আমরা মনে করি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে (পরমাণু) আলোচনা থেকে কোন বাস্তব ফল আসবে। কী হবে, তা আমরা জানি না। তবে বিশ্বাস করি না যে, এতে কিছু হবে।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে আমি জনগণকে ব্যাখ্যা করব, কেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এতো জোর দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে চায়। আমি পরিষ্কারভাবে জানাব, তাদের আসল উদ্দেশ্য কী।’
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চার দফা আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে ওমান। আলোচনার লক্ষ্য হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে, বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করবে। এদিকে তেহরানের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানকে দাবি মেনে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে।কারণ গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আলোচনা দ্রুত অগ্রসর না হলে খারাপ কিছু ঘটবে।

তবে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক, ইরান দেশের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য হিসেবে ইরানের অধিকার ‘স্পষ্টভাবে সুস্পষ্ট’ এবং এমন কোন পরিস্থিতি নেই যেখানে ইরানিরা এ থেকে বিচ্যুতি মেনে নেবে।তিনি আরও বলেন,’যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে আগ্রহী হয়, তবে একটি চুক্তি হাতের নাগালে রয়েছে এবং আমরা এমন একটি সমাধানে গুরুতর আলোচনার জন্য প্রস্তুত, যা চিরকাল এই ফলাফল নিশ্চিত করবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে তেহরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প নতুন চুক্তিতে যেতে চান। এরপরই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশ সীমার অনেক বেশি। তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম কোন কাজে আসবে না। এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান স্টিভ উইটকফ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আর ১ শতাংশ সমৃদ্ধকরণও ওয়াশিংটন মেনে নেবে না।