রাশিয়ার এঙ্গেলস বিমান ঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে ওই বিমানঘাঁটিতে আগুন লেগে বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার (৪৩৫ মাইল) দূরে অবস্থিত এই বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার একটি ভিডিয়ো রাশিয়ার টেলিগ্ৰামে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের ফলে এক বিশালাকার আগুনের গোলায় আকাশ আলোকিত হয়ে উঠেছে। তার একটু বাদে শোনা যাচ্ছে কান ফাটানো শব্দ। শেষে দেখা যাচ্ছে ‘মাশরুম-ক্লাউড’, বা ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে ধোঁয়ার মেঘ। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর যে ধরণের ‘মাশরুম-ক্লাউড’ দেখা যায়, অনেকটা সেই রকম। তবে শুধু বিমানঘাঁটি নয়, অভিযোগ উছেছে যে রাশিয়াজুড়ে রাতভর দফায়-দফায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। এর একদিন আগেই ইউক্রেনের ৪৬ ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করেছিল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা জানায়, এর মধ্যে বেশিরভাগ ড্রোন সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ অঞ্চলের আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, ৪১টি ড্রোন বেলগোরোদ অঞ্চলের আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে, বাকিগুলি ধ্বংস করা হয়েছে ব্রিয়ানস্ক, কুরস্ক ও ওরিওল অঞ্চলে। সোভিয়েত আমলের শুরু থেকে বিদ্যমান এঙ্গেলসের এই ঘাঁটিতে রাশিয়ার টুপোলেভ টু-১৬০ পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ভারী কৌশলগত বোমারু বিমান মোতায়েন রয়েছে, যাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘হোয়াইট সোয়ান’ বলা হয়।
সারাতোভের গভর্নর রোমান বুসারগিন বলেছেন, এঙ্গেলস শহরে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা হয়েছে, যাতে একটি বিমান ঘাঁটিতে আগুন লেগেছে এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি এঙ্গেলস ঘাঁটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেননি, তবে এটি এই অঞ্চলের প্রধান বিমান ঘাঁটি। এঙ্গেলস জেলার প্রধান ম্যাক্সিম লিওনভ বলেছেন, স্থানীয়ভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত বিবরণ দেননি।
অভিযোগ উঠেছে, ইউক্রেন ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে এঙ্গেলস বিমান ঘাঁটিতে হামলা করছে। জানুয়ারিতে তারা দাবি করেছিল, তারা এই ঘাঁটির জন্য একটি তেল ডিপোতে হামলা চালিয়েছে, যার জেরে বড় অগিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা নেভাতে পাঁচ দিন লেগেছিল। এক ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সূত্র তখন বলেছিল যে, ড্রোন হামলায় এঙ্গেলস ঘাঁটিতে গাইডেড বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ করা একটি গুদামে আঘাত হেনেছে।
কিয়েভ আগে থেকেই বলে আসছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে তাদের হামলার লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা। তাদের দাবি, এই হামলাগুলি মূলত মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে দুর্বল করা এবং রাশিয়ার টানা বোমা হামলার জবাব হিসেবেই ইউক্রেন এসব করছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কথা বলার পর তার দেওয়া ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কেবল যুদ্ধবিরতিতে আংশিক সম্মতি দিয়েছেন তিনি। তারপরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, যুদ্ধবিরতিতে মৌখিক সায় দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাগাতার কিয়েভে হামলা চালিয়ে গিয়েছে মস্কো। তারই পালটা জবাব রাশিয়া ইউক্রেন দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।