খেলতে খেলতে পুকুরপাড়ে। তারপরেই ঘটল মর্মান্তিক ঘটনা! পুকুরের জলে ডুবে মৃত্যু হল দুই বালকের। তারা সম্পর্কে দুই ভাই। এক সঙ্গে দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যান পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার হতভাগা বাবা। পরিবারে শুধুই কান্নার রোল। একই পরিবারের দুই বালকের অকাল মৃত্যুতে শোক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা গ্রামজুড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে মালদহের গাজোল থানার দেওতলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দোঁয়াস গ্রামে।
বাড়ির অদূরে ফাঁকা মাঠের পাশে রয়েছে একটি পুকুর। খেলতে খেলতে পায়ে হেঁটে সেই পুকুরপাড়ে চলে যায় দুই ভাই। তাদের বয়স যথাক্রমে পাঁচ ও সাত বছর। সেই সময় কোনও রকমে ছোট ভাই পাড় থেকে গড়িয়ে পুকুরে পড়ে যায়। ভাইকে জলে হাবুডুবু খেতে দেখে আর স্থির থাকতে পারেনি সাত বছরের ছেলেটি। ডুবন্ত ছোট ভাইকে বাঁচাতে সে-ও পুকুরে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুই পুত্রকেই হারিয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার বাবা।
পুকুরের জলে ডুবে মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। পাঁচ ও সাত বছরের দুই ছেলেকে একই দিনে একসঙ্গে হারিয়ে অকূল শোক পাথারে নিমজ্জিত সিভিক ভলান্টিয়ারের গোটা পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই ভাইয়ের নাম পরবিন্দু মুদি (৭) ও অভি মুদি (৫)। তাদের হতভাগা বাবা রবি মুদি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি গাজোল থানায় কর্মরত। ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার রবি মুদি। দুই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি শোকে কাঠ হয়ে যান। তাঁর বাড়িতে ছুটে যান গাজোল থানার পুলিশ অফিসাররা। তাঁরাও তাঁকে সমবেদনা জানান।রবিবাবু জানান, প্রতিদিনের মতো এদিনও তিনি ডিউটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। ইউনিফর্ম পড়ছিলেন। তার মধ্যেই খবর পান তাঁর দুই ছেলে পরবিন্দু ও অভি গ্রামের পুকুরে পড়ে গিয়েছে। এই খবর পেয়ে রবিবাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেই পুকুরপাড়ে ছুটে যান। গিয়েই যে দৃশ্য দেখেন তাতে তাঁদের মাথায় কার্যত বাজ পড়ে। গ্রামবাসীরা তখন দুই ছেলের নিথর দেহ পুকুর থেকে তুলেছেন। গ্রামবাসীরা দুই বালকের নিথর দেহ তড়িঘড়ি করে গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেওতলা অঞ্চলের দোঁয়াস গ্রামের বাসিন্দা এক কৃষক আমিনুল ইসলাম সেই সময় পুকুরের অদূরেই একটি জমিতে কাজ করছিলেন।

তিনি বলেন, “ওই দুই ভাইয়ের সঙ্গে আর একটি ছেলে ছিল। দুই ভাইয়ের জলে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তাদেরই ওই বন্ধু আর্ত চিৎকার শুরু করে। ছেলেটি আমাকে ডুবে যাওয়ার জায়গাটি দেখায়। আমি তখন জলে ঝাঁপ দিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। আমাদের চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন।” এই ঘটনার খবর পেয়ে গাজোল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। প্রথমে পুলিশ পরিবারবর্গকে সান্তনা, সমবেদনা জানানোর চেষ্টা করে। পরে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।