যে কোনও সমস্যাতেই মানুষ প্রথমেই শরণাপন্ন হয় পুলিশের কাছে। সাধারণ মানুষের মনে এক মিথ রয়েছে যে পুলিশ থাকলে তাদের কোনও ক্ষতি হবে না। যেখানে পুলিশ থাকবে সেখানে মানুষও নিরাপদে থাকবে। কিন্তু পুলিশই কি সব সময় নিরাপদ? সোমবার গভীর রাতে পুলিশের এসএসআইকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।আর এই হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার উদ্মালপেটের কাছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত পুলিশ আধিকারিকের নাম শানমুগাভেল। কুড়িমঙ্গলমে স্থানীয় এআইএডিএমকে বিধায়কের একটি সম্পত্তিতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই সম্পত্তিতে কর্মরত এক কর্মী ও তাঁর দুই ছেলের মধ্যে মদ্যপ অবস্থায় অশান্তি চলছিল। সেই অশান্তি থামাতেই গিয়েছিলেন শানমুগাভেল। পুলিশ সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, রাতে টহলের জন্য বেরিয়েছিলেন এসএসআই শানমুগাভে। তাঁর কাছে হঠাৎ কুড়িমঙ্গলমে অশান্তি ও হাতাহাতির খবর আসে। খবর পেয়েই তিনি তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন এস্টেট কর্মী মূর্তি এবং তাঁর দুই ছেলে থাঙ্গাপান্ডিয়ান এবং মানিকান্দনের মধ্যে তীব্র বচসা চলছে। ছেলেরা বাবার উপর রীতিমতো চড়াও হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই শানমুগাভেল সংঘর্ষ থামাতে হস্তক্ষেপ করেন। পাশাপাশি আহত এস্টেট কর্মী মূর্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থার চেষ্টা করেন।
পাশাপাশি তিনি মূর্তির বড় ছেলে থাঙ্গাপান্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলে তাকে বোঝানোরও চেষ্টা করছিলেন। আচমকা মূর্তির ছোট ছেলে মানিকান্দন, যিনি লুকিয়ে ছিলেন শানমুগাভেলের ওপর কাস্তে দিয়ে আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। এরপর বাবা এবং বড় ছেলেও আক্রমণে যোগ দেয়। অভিযোগ, ওই পুলিশ আধিকারিককে রীতিমতো ধাওয়া করে কুপিয়ে খুন করা হয়। তাঁর ড্রাইভার পালাতে সক্ষম হন এবং থানায় গিয়ে খবর দেন। বর্তমানে তিন অভিযুক্ত পলাতক। মূর্তি এবং তার ছেলেদের গ্রেফতারের জন্য পাঁচটি বিশেষ দল গঠন করেছে পুলিশ। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন এই ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে পরিবারের একজন যোগ্য সদস্যকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি ১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।

তবে তামিলনাড়ুর প্রধান বিরোধী দল এআইএডিএমকে এখনও এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনের মাত্র আট মাস আগে এই ঘটনাটি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিজেপির নারায়ণন তিরুপতি এই হামলাকে ‘মর্মান্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই ধরনের ঘটনাকে ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পরিস্থিতি যখন খারাপ হয় তখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সৎ সরকারের কর্তব্য।’