নির্বাচন কমিশনের ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর)-কে সামনে রেখে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি-র ভয়াবহ ছায়া দেখছে পশ্চিমবঙ্গের দেড়শোরও বেশি সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে একজোট হয়ে তারা তৈরি করল ‘এসআইআর বিরোধী গণ আন্দোলন’ নামে এক মঞ্চ। মঞ্চের তরফে সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়াটি হলো আসলে ঘুরপথে এনআরসি কার্যকরের কৌশল। শুধু তাই নয়, নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কায় এ পর্যন্ত যাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন, তাঁদের সমস্ত দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে বলেও জোরালো দাবি তুলেছে এই মঞ্চ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী ৫ নভেম্বর, বুধবার কলকাতার পুরসভার পাশেই হবে প্রথম সমাবেশ, যা এই এসআইআর-বিরোধী আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। এর পাশাপাশি, আগামী ১০ ডিসেম্বর কলকাতায় এক সুবিশাল মহামিছিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে সোমবার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন সংগঠনের নেতা ছোটন দাস ও শক্তিমান ঘোষ। তাঁরা জানান, এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলায় জেলায় কনভেনশন এবং একেবারে শেষে নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধরনা-অবস্থানের পরিকল্পনা। এই মঞ্চের নিশানায় স্পষ্টতই রয়েছে বিজেপি ও আরএসএস। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, যিনি সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, কে নাগরিক আর কে নন, তা নির্ধারণ করার এক্তিয়ার সম্পূর্ণভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের, কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের নয়।

তিনি স্পষ্ট বলেন, একটি সাংবিধানিক সংস্থা নাগরিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে এবং নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলে নাম বাতিলের কোনো অধিকার কমিশনের হাতে নেই। তাঁর কথায়, ‘ইনটেনসিভ রিভিশন’ হতে পারে, কিন্তু ‘এসআইআর’ নামে কোনও কিছুই প্রচলিত আইনে নেই। অন্যদিকে, ছোটন দাস এসআইআর-কে বেআইনি ও সংবিধান-বিরোধী বলে অভিহিত করে নির্বাচন কমিশনকে ‘আদিবাসী ও দলিত বিরোধী’ বলে আখ্যা দেন। তাঁর মতে, কমিশন আরএসএস ও বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে। একই সুরে প্রসূন ভৌমিক অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ‘দলদাস’ হিসেবে কাজ করে ঘুরপথে এনআরসি চালাচ্ছে। এই মঞ্চে ড. মসহুর রহমান ও সুবল সরকার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।