থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে নাটকীয়তা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহিষ্কার ও সরকার ভেঙে দেয়ার পর আবার নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথও নিয়েছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রীকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছে এবং এবার তাকে করা হয়েছে সংস্কৃতিমন্ত্রী।
এএফপির এক প্রতিবেদন মতে, কম্বোডিয়ার এক সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) হঠাতই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে। ওইদিনই থাই রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ণ সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিতকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী করেন। সেই সঙ্গে অনুমোদন করেন নতুন মন্ত্রিসভাও।
তিনদিন পর আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানী ব্যাংককের আমপোর্নসান থ্রোন হলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ণ ও রানি সুথিদার সামনে শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। যার মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নও। তিনি নতুন মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
অন্যতম গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ফুমথাম ওয়েচায়াচাইকে। তিনি পেতংতার্নের বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার দীর্ঘদিনের সহযোগী। ফুমথাম পেতংতার্নের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

কম্বোডিয়ার সাথে সীমান্ত বিরোধ মোকাবেলায় পেতংতার্ন ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এর মধ্যে গত মে মাসে সীমান্তে একটি সশস্ত্র সংঘর্ষ হয় যেখানে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের একটি ফোনারাপ ফাঁস হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। ফোনালাপে পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের এক সেনা কর্মকর্তার সমালোচনা করেন এবং হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে ডেকে তার প্রতি অতিমাত্রায় নমনীয় আচরণ করেন বলে জনগণের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়।
এরপরই পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজপথে নামেন থাই জনগণ। পেতংতার্নের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আদালতে পিটিশন দায়ের করা হয়। সাংবিধানিক আদালতে গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোটাভুটি হয়। আদালত ৭-২ ভোটে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ে থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত দেশের ভারপ্রাপ্ত নেতার দায়িত্ব পালন করবেন।
থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনীর প্রকাশ্যে সমালোচনার সুযোগ নেই বললে চলে। কারণ দেশটির সেনাবাহিনী রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক প্রভাব বজায় রেখে আসছে। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সাংবিধানিক আদালতে প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন পদচ্যুত হলে ২০২৪ সালের আগস্টে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট। থাইল্যান্ডে তিনিই হচ্ছেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তখন তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ফিউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার ছোট মেয়ে।
পেতংতার্ন ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উং ইং ডাকনামেও পরিচিত পেতংতার্ন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন ফিউ থাই পার্টির ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রধান হন তিনি।
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় সন্তানের মা হন পেতংতার্ন। নির্বাচনে তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। পেতংতার্ন থাকসিন পরিবার থেকে সরকারের শীর্ষ পদে আসা তৃতীয় ব্যক্তি। বাবা থাকসিনের পাশাপাশি পেতংতার্নের ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রাও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।