ফেডারেশন বনাম ডিরেক্টরস গিল্ডের দ্বন্দ্ব নিয়ে ঠিক কী বললেন পরমব্রত-অনির্বাণরা?

Spread the love

২০২৪-এর শুরু থেকেই প্রকাশ্যে আসে ফেডারেশন ও ডিরেক্টর্স গিল্ডের দ্বন্দ্ব। আর দুই পক্ষের এই লড়াইয়ে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। যদিও আখেড়ে এই ঝামেলায় ক্ষতির শিকার হয়েছে দুই পক্ষই। বারবার একে অপরের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে তারা। এদিকে ১ মে, শ্রমিক দিবসেই মিটিং-এর ডাক দিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি অরূপ বিশ্বাস। আবার আর্টিস্ট ফোরামেরও মিটিং রয়েছে। আর তাই বলাইবাহুল্য এদিন আবারও একবার চর্চা কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।

এদিক তার আগে বুধবার রাতে একটি বিশেষ ভিডিয়ো বার্তায় ফেডারেশন-পরিচালক দ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খলেন নির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী ও বিদুলা ভট্টাচার্য। ‘আপনাদের কাছে সাড়ে ১৫ মিনিট সময় চাইছি। বিষয়- “ফেডারেশন ও ডিরেক্টরস গিল্ড’ ক্যাপশানে একটা লম্বা ভিডিয়োতে গোটা সমস্যাটি নিজেদের মতো করে তুলে ধরেন তাঁরা। সেই ভিডিয়োতে ঠিক কী বলেছেন তাঁরা? চলুন শুনে নি…

ভিডিয়োর শুরুতে অনির্বাণ ও সুদেষ্ণা বলেন, ‘এই ভিডিয়োটি আমাদের টেকনিশিয়ান ভাইবোনেদের জন্য। তাঁদের অনেকেই জানেন, নানান নিময়কানন নিয়ে আমাদের সঙ্গে ফেডারেশনের একটা বিবাদ হয়েছে। তাঁদের বারবার বলা হয়েছে আমরা নাকি তাঁদের বিপক্ষে ৷ আমরা যেমন দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের চিনি, তাঁরাও আমাদের বহুবছর ধরে চেনেন। তাঁরা আমাদের পাশে থেকেছেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহুবছর কাজ করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁরা আমাদের খুব ভালো করে চেনেন ৷ আমাদের আসল উদ্দেশ্য কী তা তাঁরা জানেন ৷ তাঁরা সবটাই বোঝেন, প্রবল চাপ ও হুমকির মুখে তাঁদের তাঁদের মনের কথা বলতে পারেন না। তবুও উল্টোদিকে দিবারাত্রি তাঁদের মনে কিছু সন্দেহ হয়ে থাকে, আমরা চাই তাঁদের সামনে সত্যিটা তুলে আনতে। কারা তাঁদের স্বার্থে কাজ করছে, আর কারা তাঁদের বিপক্ষে, একটু দেখে নেওয়া যাক…।’

এরপর পরমব্রত বলেন, ‘প্রথম ঘটনাটা মনে আছে তো ? রাহুল মুখোপাধ্যায় চরকির হয়ে কলকাতায় প্রথম কাজটা শুরু করেছিলেন ৷ ক’দিন শুট হয়ে কাজটা থেমে যায় ৷ কেন ? কারণ ফেডারেশন চরকির কাছে চারগুণ বেশি টাকা দাবি করে টেকনিশিয়ানের জন্য ৷ তাদের যুক্তি ছিল চরকি একটি বিদেশি সংস্থা ৷ তাই ফেডারেশনের বানানো তথাকথিত নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ছবি হলে চারগুণ পেমেন্টের দাবিতে তারা সোচ্চার হন। যদিও চরকি দ্বিগুণ টাকা দিতে রাজি ছিল।’

এরপর ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী ও পরমব্রত বলেন, ‘তাদের আলোচনা ভেস্তে যায়, চরকি তাদের অফিস গুটিয়ে আবার বাংলাদেশ ফিরে যায়। পরবর্তীতে যে কাজটা শুরু হয়েছিল, সেটা শেষ করতে রাহুল ঢাকায় যান, এই কারণে ফেডারেশন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এরপর তারা ডিরেক্টরস গিল্ড গিল্ডকে রাহুলকে সাসপেনশনের নির্দেশ দেয়, গিল্প প্রথমে সাসপেন্ড করলেও পরে ভুল বুঝতে পেরে তা তুলে নেয়। এরপরই ফেডরেশনের তরফে সমস্ত গিল্ডের কাছে নির্দেশ যায়, রাহুলের পরের ছবির শ্যুটিংয়ে যাতে কেউ না যায়, সেখান থেকেই বিবাদের শুরু…। ’

ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর প্রশ্ন তোলেন, ‘এবার আপনি ভেবে দেখুন, চরকি একটি বিদেশি ওটিটি সংস্থা তারা কলকাতায় এসে কাজ শুরু করেছিল, তারা বছরে বহু ওটিটি সিরিজ বানাতো, কিন্তু সেই কাজগুলো কারা হারালেন শুধু ডিরেক্টররা? ধরুন চরকি যদি ১২টা কাজ করত, তাহলে সেই কাজ করতেন ১২ জন পরিচালক, কিন্তু প্রত্যেকটা প্রোডাকশনে যে ৫০-৭০ জন করে টেকনিশিয়ান বা আরও বেশি টেকনিশিয়ান কাজ করতেন, তাদেরও কাজ চলে গেল।’ পরমব্রত বলেন, ‘তাহলে একটু ভেবে দেখলেই এর উত্তর পাবেন, ফেডারেশনের গাজোয়ারির কারণে তাহলে ক্ষতিটা কার হল? শুধু তাই নয়, এর ফলে অন্য বিদেশি সংস্থার কাছেই বা কী বার্তা গেল?….’

ভিডিয়োতে আরও বলা হয়েছে, সেসময় পরিচালক-ফেডারেশন দ্বন্দ্বের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্বাবধানে সমস্যা মেটাতে এক কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিব ৷ তবে চারমাস কেটে গেলেও কোনও নোটিস আসেনি এখনও ৷ এরপর সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশনের কোন নিয়ম নিয়ে সমস্যা তাও তুলে ধরা হয়েছিল৷ এতে ফের ফেডারেশন ক্ষিপ্ত হয় ডিরেক্টর্স গিল্ডের ওপর ৷ যে সমস্ত পরিচালকরা ওই সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রেখেছিলেন তাঁদের কাজ একে একে আটকানো শুরু হয় ৷ সেই সব পরিচালকের কাজ বিভিন্ন টেকনিশিয়ানদের দিয়ে আটকানো হয় ৷ যখন কোনও কাজে টেকনিশিয়ানরা আসেন না তখন টলিউড ইন্ডাস্ট্রির সকলেই জানেন ওপর থেকে চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে কাজে আসতে দেওয়া হয় নি।

এভাবেই একটা লম্বা ভিডিয়োতে গোটা সমস্যাটা তুলে ধরেছেন অনির্বাণ, পরমব্রত, সুদেষ্ণা ও ইন্দ্রনীলরা। বিদুলা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগে বাইরের কত শুটিং এখানে হত ৷ এখানেওবা কটা ছবি হচ্ছে ৷ ২০২৪-এ মাত্র ৩৬টি ছবি হয়েছে’।’এই নিয়মের ফলে টেকনিশিয়ানদের কাজ কমেছে কি না, তা তারাই ভালো বলতে পারবে ৷’সুদেষ্ণা রায়ের কথায়, ‘প্রথমত এই নিয়মগুলো ফেডারেশনের নিজস্ব ৷ এগুলো একতরফা ভাবে বানানো হয়েছে ৷ ফেডারেশন একটা ট্রেড ইউনিয়ন ৷ ভারতের কোথাও কোনও আইনে কোনও ট্রেড ইউনিয়ন কোনও নিয়ম বানাতে পারে না ৷ এটা দেশের আইন ও সংবিধান বিরোধী ৷’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *