বাংলাদেশ নাকি উত্তরপূর্ব ভারতের জন্য সাগরের গার্ডিয়ান। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে এই কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। এবং এই কথা প্রথম বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। আর এবার সেই গার্ডিয়ান বাংলাদেশেরই চোখে জল। কারণ, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করতে এবার সোজা সড়ক পথের বদলে সমুদ্রে নামতে হবে তাদের। এতে খরচ বাড়বে, লোকসান হবে, ব্যবসা ধাক্কা খাবে। আর তাই গার্ডিয়ান বাংলাদেশের হুঙ্কার পরিণত হয়েছে মিনমিনে আকুতিতে।
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি রফতানির ওপর ভারত বিধিনিষেধ আরোপ করতেই মাতব্বরির ফল পেল বাংলাদেশ। এতদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বি করা ঢাকা এবার দিল্লির কাছে চিঠি লিখে কাতর আকুতি শুরু করল। বাংলাদেশের দাবি, স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক আমদানিতে ভারত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেই সমস্যার সমাধান করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া উচিত।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ভারতের কাছে বৈঠকের আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সেই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। এই নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পালটা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমরা ভারতকে বলব, আপনারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, আসুন সমাধানের পথ বের করি।’
উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ভারতের কোনও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি ‘রেডিমেড’ পোশাক ঢুকবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র কলকাতা এবং মুম্বইয়ের নভশেবা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে বাংলাদেশি ‘রেডিমেড’ পোশাক। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের আওতাধীন বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের (ডিজিএফটি) তরফে জানানো হয়েছে, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনও স্থলবন্দর বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি ও চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ফল, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, কাঠের আসবাবপত্র, প্রক্রিয়াজাত খাবার (বেকড খাবার, স্ন্যাকস, চিপস), সুতোর মতো কোনও জিনিস ঢুকতে দেওয়া হবে না।

ইউনুসের সরকারের পদক্ষেপের জবাবেই দিল্লির এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এর জেরে যশোরের বেনাপোল বন্দর থেকে লালমনিরহাট, শিলেটের স্থলন্দরগুলিতে সেভাবে ট্রাকের দেখা নেই। এই আবহে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সমকালের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি পণ্য প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল মহম্মদ ইউনুসের সরকার। সেইসঙ্গে হিলি এবং বেনাপোল দিয়ে ভারতীয় চাল প্রবেশের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপায় বাংলাদেশ। এর পালটা পদক্ষেপে এবার বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে ছাড়ছে ভারত। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ইউনুসের হম্বিতম্বির জেরে মাথায় হাত পড়বে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের রফতানিকারকদের বক্তব্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। তবে বর্তমানে ভারত যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। স্থলপথে যে পণ্য তিনদিনে রফতানি করা যায়, বন্দর দিয়ে তা পাঠাতে ২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এতে খরচও বাড়বে।