‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে’

Spread the love

‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে।’ পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের পুশব্যকের ঘটনায় সোমবার বিধানসভায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদের ৪ ও পূর্ব বর্ধমানের এক পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করার ঘটনায় বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আধার, প্যান-সহ সমস্ত ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে এই অন্যায় হচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

ঘটনার সূত্রপাত মহারাষ্ট্রে। জানা গিয়েছে, কাজের সন্ধানে মুম্বইয়ে যাওয়া পাঁচজন শ্রমিক মিনারুল শেখ, নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, মেহবুব শেখ, ডাবলু শেখ এবং মুস্তফা কামাল স্থানীয় পুলিশের হাতে আটক হন। অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে পরিচয় যাচাই না করেই বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিএসএফও যাচাই না করেই ৫ জনকে কোচবিহার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। সেখানেই বিজিবি তাঁদের আটক করে লালমনিরহাটে নিয়ে যায়। 

বিষয়টি সামনে আসে ১০ জুন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ ও প্রশাসন সক্রিয় হয়। রাজ্যসভার সাংসদ ও পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানান, তাঁদের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা একেবারেই অনৈতিক। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো মাত্র তিনি কেন্দ্রকে অবহিত করতে বলেন এবং ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।

শনিবার ওই শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন মিনারুল, নাজিমুদ্দিন ও মুস্তফা একটি ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেশে ফেরার আবেদন জানান। এরপর বিএসএফ-বিজিবি যৌথ ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর মাধ্যমে রবিবার বিকেলে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে তাঁরা কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে রয়েছেন। বাকি দু’জন ডাবলু শেখ ও মেহবুব শেখ বিজিবি হেফাজতে রয়েছেন, সোমবার তাঁদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। মেখলিগঞ্জ থানার ওসি মণি ভূষণ সরকার জানান, বিকাল চারটের সময় তিনজনকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা খুবই ক্লান্ত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই ঘটনার জেরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেন, যেখানে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার রয়েছে, সেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা ভাষাভিত্তিক বৈষম্য। এটা রাজ্যবাসীর অপমান। তিনি আরও বলেন, মহারাষ্ট্র সরকার বাংলা ভাষার জন্য কাউকে বাংলাদেশি বললে তা গোটা বাংলাকে বাংলাদেশি বলার শামিল। এটা মেনে নেওয়া যায় না। 

এদিকে সামিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মুম্বই পুলিশ বা বিএসএফ কেউই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ঘটনার কথা জানায়নি। বিষয়টি সরাসরি রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের হস্তক্ষেপেই সামনে আসে এবং শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। তবে রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আংশিকভাবে সামাল দেওয়া গেলেও কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শাসকদল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *