বাবাকে দিয়ে প্যাড কেনাতে পারব না দাবি মমতার

Spread the love

এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়েছিল মমতা শঙ্করের একটি বক্তব্যকে ঘিরে। আধুনিক নারীর সাজপোশাক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যৌনকর্মীদের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। শাড়ির আঁচল নামিয়ে পরা মেয়েদের নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘রাস্তার মেয়ে’, ‘ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ানো মেয়ে’ প্রভৃতি শব্দবন্ধ টেনে আনেন অভিনেত্রী, সেই নিয়ে রে রে করে উঠেছিলেন অনেকেই। আর স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে মন্তব্য করে ফের বিতর্কের মুখে মমতা।

সম্প্রতি সংবাদ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজ্ঞাপনের ধরন বদল প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা শঙ্কর স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গত টেনে বলেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন তো একটা প্রয়োজনীয় দ্রব্য। সেটা তো মানুষ কিনবেন। এত দিন এর বিজ্ঞাপন অন্যভাবে দেখানো হত। কিন্তু এখন সেখানে লাল রঙ দেওয়া হয়।’ তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘সেখানে লাল রংটা দিয়ে বোঝাতে হবে। মানুষ কি দিনে দিনে বোকা হচ্ছে। আমরা কি অসভ্য হচ্ছি? আমরা এগোচ্ছি না পিছিয়ে যাচ্ছি? আমরা এত বোকা হয়ে যাচ্ছি যে আমাদের চামচে করে গিলিয়ে দিতে হবে? না হলে কি জিনিসটা বিক্রি হবে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার লজ্জা করে। আমি টিভি দেখছি, সেখানে এই অ্যাড চলছে, আর তার মাঝে কেউ এসে গেলে আমার লজ্জা করে। আমি এতটা আধুনিক হতে পারিনি যে, আমার ছেলেকে ওরকম কিছু একটা কিনতে পাঠাবো, বা আমার বাবাকে আমি কিনতে দেব। হ্যাঁ, আমার স্বামীকে দিয়ে আমি কেনাতে পারি।’

কিন্তু তাঁর যদি কখনও খুব প্রয়োজন হয়, অথচ স্বামী সেই সময় যদি সঙ্গে না থাকেন তখন কী করবেন তিনি? প্রশ্নে মমতা বলেন, ‘আমি একটা কাগজে লিখে দেব। আমার বাড়ির কাজের লোকেও যদি পাঠাতে হয়, লেখা কাগজটা দেব। আমরা এত দিন বড় হয়েছি, কই কাউকে তো আমাদের বলতে হয়নি। কোনও ছেলে বন্ধুকে বলতে হয়নি। কেন বলব, আমি নিজেকে ছোটো করব কেন?’

কিন্তু মাসিক নিয়ে যে ট্যাবু তাতে কি মমতাও বিশ্বাসী? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না ট্যাবু না। এর প্রয়োজনীয়তা সকলে জানেন। কিন্তু আমি পারব না ওটা করতে। তাহলে আমরা টয়লেটে যাই কেন? এই হিপোক্রেসিটা করি কেন? তাহলে এতটা আধুনিক হলে রাস্তাতেই তো সব করা যায়। পাগলকে আমি বলব যে, সে বেশি আধুনিক তবে। সে জামা কাপড় না পরেও রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন তো আমরা সেই পর্যায় চলে গিয়েছি। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের সময় কি এগুলো ছিল না? নাকি আমরা দোকান থেকে কিনতাম না?’

আর তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে ফের তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই সাক্ষাৎকারটি প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য করেছেন। একজন লেখেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন যদি লজ্জার বিষয় হয় তাহলে তো সন্তান প্রসব করাও লজ্জার! বলছি কাকি (সবাইকে কাকিমা বলি না) আপনি পুরুষ ডাক্তারের কাছে যাবেন না কিন্তু! আর স্যানিটারি ন্যাপকিন বাড়িতে বানিয়ে নেবেন।’ আর একজন মন্তব্য করেন, ‘আরে! এই মহিলার সমস্যা কী? স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে ওঁনার লজ্জা করে!!! এইসব দেখতে, শুনতে হবে?!!!’

আর একজন লেখেন, ‘মাসিক তো একটা স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। স্যানিটারি ন্যাপকিন এমন একটি প্রয়োজনীয় বস্তু যা কোটি কোটি মহিলাকে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। সেটা কে কিনতে যাবে আর কে যাবে না এখানে এত বাছ-বিচার আসছে কীভাবে ? তাহলে তো সর্দি হলে সর্দির ওষুধ কিনতেও লজ্জা পেতে হবে। একজন মানুষ ভালো অভিনয় করেন বা অসাধারণ নৃত্যশিল্পী মানে এমন নয় যে দুনিয়ার সমস্ত বিষয়ে তার থেকে এক্সপার্ট ওপিনিয়ন নিতে হবে। তিনি ওঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস আঁকড়ে থাকতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে সমাজের প্রচলিত আদিম ভ্রান্ত ধারণাগুলো ভাঙতে অনেক পরিশ্রম, অনেক লড়াই , অনেক আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়েছে। সেই এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা যদি মনোমত না হয় তাহলে অন্তত বাকিদের কাজটা কঠিন করে দেবেন না। আর বিনীতভাবে একটি কথা বলি, যে শিল্পী নিজের সময়ের থেকে এগিয়ে থাকার পরিবর্তে পিছিয়ে থাকায় বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত ইতিহাস তাকে মনে রাখে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *