উঠেছিলেন বাবিল খান। কাঁদতে কাঁদতে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন ইরফান পুত্র। বাবিলকে বলতে শোনা যায়, ‘বলিউড এতটাই f***। বলিউড এতটা খারাপ।’ বাবিলের এই ভিডিয়োর পরই প্রশ্ন ওঠে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে…। যদিও পরে ভিডিয়োটি ডিলিট করে দেওয়া হয়।
কিন্তু বাবিলের এই ভিডিয়োর পরই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা বিনোদন দুনিয়ায় কাজ কি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে?
শ্রীলেখা মিত্র
‘এখন যখন বাবিল খান বলিউডকে Fake (ফেক) বলছেন তখন এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি একথা ৫ বছর আগে বলেছিলাম, তখন কেউ কেউ বুঝেছিলেন, তবে অনেকেই আমার খামতি খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ বলেছিলেন, আমি নাকি ভিকটিম কার্ড খেলছি, আমি মিথ্যেবাদী! আজ যখন আরও মানুষ এটা নিয়ে কথা বলছেন, তখন অনেকেই বুঝতে পারছেন।’
শ্রীলেখার বক্তব্য, ‘৫ বছর আগে সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুটা আমায় ধাক্কা দিয়েছিল। নিজের কাজকে ভিত্তি করেই এগোব ঠিক করে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম। আসলে যে কাজটা পারে, সে নিজের কাজ নিয়ে কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না। এটাই আশা করে যে, আমার কাজের নিরিখে আমি কাজ পাব। কিন্তু এখানে তো ট্যালেন্টটা গৌণ, মুখ্য হয় PR (প্রচার), কার সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার উপর। কেউ আবার নিজের ট্যালেন্টের কথা বললে, সেখানে খামতি খোঁজার চেষ্টা হয়। তাহলে এবার বলতে হবে আমার মতো বাবিল খানও…। যদিও জানি না, উনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল কি না!’
শ্রীলেখা বলেন, ‘বাবিল তো কম বয়সি, ইরফান খানের ছেলে বাবিলকেও আজ এই কথাগুলো বলতে হচ্ছে। এটা থেকেই বোঝা যায়, কতটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে ওকে।’
তাহলে কি যাঁরা অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এই পেশা? এখানকার ‘বিষাক্ত সংস্কৃতি’ তাঁদের খারাপ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে?

শ্রীলেখা বলেন, ‘অবশ্যই এটা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। আমি এবিষয়ে ১০০ শতাংশ সহমত।’ তাঁর দাবি, ‘গুটি কয়েক মানুষের স্বার্থপরতার জন্য, লোভের জন্য, তাঁরাই শুধু কাজ করবে, আর কেউ নয়। আমরা আওয়াজ তুলি না, আমরা অন্যায়টাকে মেনে নিয়েছি। আর সেই কারণেই এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ‘
এদিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা বিনোদন জগতে কাজ সত্যিই অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করে বা মানসিক স্বাস্থ্য়ের ক্ষেত্রে কি সমস্যা তৈরি করে? এবিষয়ে কথা বলেছেন অপরাজিতা আঢ্য, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসুরাও।
অপরাজিতা আঢ্য
সব ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করাটাই চাপের। কাজ পাওয়াটাই আসলে খুব কষ্টের। প্রথম জীবনে যখন পড়াশোনা করতাম, তখন মনে হত কী কঠিন, ছাড়লে বাঁচি। পরবর্তীকালে যখন রোজগার করতে এলাম, তখন মনে হল টাকা-পয়সা আয় করাটা বেশি চাপের। তা সে যে ইন্ডস্ট্রিতেই কাজ করুন না কেন। আর এবার যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কথা হয়, তাহলে বলব, এখানে প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন, আবার বহুজন হারিয়ে যান। আমি যে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ২৮ বছর কাজ করছি, সেটা আমার কাছে গুরুর কৃপা।
শিল্পীদের ক্ষেত্রেও যেটা হয় তা হল, একটা সময় হয়ত প্রচণ্ড কাজ করলাম, তারপর হঠাৎ করেই দেখছি কাজ নেই, এটা এই ইন্ডাস্ট্রির প্যাটার্ন। এটা একটা মানসিক অবসাদ নিয়ে আসে তো বটেই। তার জন্য ইন্ডাস্ট্রিকে খারাপ বলব না, এটা এখানকার ধরণ। আমরা যেসময় TV প্রচুর কাজ করেছি, তখন সেটা ছিল টেলিভিশনের গোল্ডেন পিরিয়ড, এখন আর সেটা নেই। সিনেমার ক্ষেত্রেও এই গড়ন ও ধরণ সবই পাল্টে গেছে। কাজ করতে গেলে এখানকার সবকিছুর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করেই চলতে হবে।
তবে হ্যাঁ, কিছু Fake মানুষ লোকজনকে exploit (ব্যবহার) করেন। এমনকি কাজ দেওয়ার নামে অনেকে টাকাও চান। এধরনের বিষয় তো আছেই, থাকবেও হয়ত। তবে তারজন্য আমি সবটাই খারাপ, বা ‘ফেক’ বলে তকমা লাগিয়ে দেব না।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
আমাদের এখানে এখন একটাই মানসিক চাপ, যে কাজ নেই। যেখানে কাজটাই নেই, সেখানে আর নতুন কী মানসিক চাপ তৈরি হবে? কাজ হলে তবে তো মানসিক চাপ বা অন্য কোনও বিষয় তৈরি হওয়ার জায়গা থাকে। কাজই যেখানে বন্ধ হওয়ার অবস্থায়,তখন সেটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
হ্য়াঁ, মানসিক স্বাস্থ্য়ের ক্ষতি করেই। বড় ক্ষতি না হলেও চাপ সবসময়ই থাকে। সেটা যে কোনও ফিল্ডেই থাকে। আমি কীভাবে কাজটা ডেলিভার করছি, সেই চাপটা তো থাকেই। কারণ, কেমন কাজ করছি, তার উপর আমার কাজ পাওয়াটাও নির্ভর করে। আর এটা তো রিজিওনাল মার্কেট এখানে যেমন চাপ আছে, সেখানে বাবিল খান তো জাতীয় স্তরে কাজ করেন। সেটা আরও বড় মার্কেট। তার উপর ও ইরফান খানের ছেলে, সেজন্যও কিছুটা হলেও অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে সারাক্ষণ একটা তুলনা আসতে থাকে।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি ওদের উপর একটা চাপ থাকেই। কারণ, কাজ হিট করলেও ঠিক আছে নাহলে ওরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কারণ পরের কাজটা পাবে কিনা, চ্যানেল নেবে কিনা! এই সব নানান চাপ থাকে। টার্গেটের মতো। আমাদের এখানে টার্গেট আপনি কটা সিনেমা বা সিরিয়াল হিট দিলেন? আর এখন মানুষের হাতে রিমোর্ট, চাইলেই ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। যদিও অভিনেতাদের ভালো অভিনয় করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না এখানে।