ভারতের মেয়েদের বিশ্বজয়ের কারিগর! কে অমল মজুমদার?

Spread the love

ভারতীয় ক্রিকেটে অমল মজুমদারের নাম উঠলে অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অনেকেই বলেন, ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটারদের তালিকা করলে প্রথমদিকে থাকবে অমলের নাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবদন্তি হলেও সচিন-সৌরভ-রাহুল-লক্ষ্মণের আমলে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বাদ পাননি অমল মজুমদার। আর সেই অমলের হাত ধরেই এবার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ভারতের মহিলা ব্রিগেড।

ভুল সময়ে জন্মগ্রহণ

ক্রিকেটে সাধারণত মনোযোগ থাকে প্রায়শই মাঠের তারকা খেলোয়াড়দের, বা খ্যাতনামা কোচদের দিকে। কিন্তু কখনও কখনও যাঁরা ধীরে সুস্থে কথা বলেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন তাঁদের দিকেও মনোযোগ আসে। অমল মজুমদার হলেন ঠিক এমনই একজন ব্যক্তি। জন্ম ১৯ নভেম্বর, ১৯৭৪ সালে মুম্বইয়ে। শৈশবে অমল মজুমদার ক্রিকেটের হাতেখড়ি নেন কিংবদন্তি কোচ রমা কান্ত আচরেকরের কাছে, যাঁর হাত ধরে বিশ্ব চিনেছিল সচিন তেন্ডুলকরকে। তাঁর পেশাদার কেরিয়ার শুরু হয় এক বিশাল চমক দিয়ে, রঞ্জি ট্রফিতে।অভিষেক ম্যাচেই তিনি হাঁকান ২৬০ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়া ইনিংস। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১১ হাজারের বেশি রান করা অমল মজুমদার কখনও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি। তার কারণ, ভারতের মিডল অর্ডারে ছিলো তখন রাহুল দ্রাবিড়-ভিভিএক্স লক্ষ্মণের মতো ক্রিকেটাররা। যাদের ভিড়ে কখনও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেননি অমল। অমল মজুমদারের ক্যারিয়ারে ১৭১টি প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ, ১১,১৬৭ রান এবং ৩০টি সেঞ্চুরি রয়েছে। তবুও তিনি কখনও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি। এর যন্ত্রণা কি ছিল না? অবশ্যই ছিল। কিন্তু অমল তা গ্রহণ করেছেন মর্যাদার সঙ্গে।

কোচিংয়ে মনোনিবেশ

২০১৪ সালে অবসর নেওয়ার পর, অমল স্বাভাবিক ভাবেই কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি প্রথমে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের তরুণ প্রতিভাদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর তাঁর অভিজ্ঞতা বাড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে-দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং কনসালট্যান্ট এবং আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিং কোচ হিসেবে তিনি কাজ করেন। খেলোয়াড়দের পড়ার ক্ষমতা ও স্পষ্ট ভাবে যোগাযোগ করার দক্ষতা তাঁকে করে তোলে এক আদর্শ শিক্ষক। যেখানেই গিয়েছেন, খেলোয়াড়রা তাঁর শান্ত স্বভাব ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের প্রশংসা করেছেন। জটিল পরিস্থিতিকে সহজ করে দেওয়ার এক দুর্লভ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। দীর্ঘ ১০ মাস কোচের পদ শূন্য থাকার পর, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে বিসিসিআই অমল মজুমদারকে ভারতীয় মহিলা দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ করে। যদিও আন্তর্জাতিক খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় শুরুতে কিছুটা বিতর্ক ছিল, তবে তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্য এবং কোচিং-এর অভিজ্ঞতার দৌলতে দ্রুতই তিনি খেলোয়াড় ও ক্রিকেট মহলের মন জয় করে নেয়। হরমনপ্রীত, স্মৃতি, দীপ্তি, শেফালিদের পাল্টে নয়, বরং তাঁদের আরও শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী ও প্রভাবশালী করে তোলেন। অবশেষে অমল মজুমদারের কোচিংয়েই ইতিহাল লিখল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। ২০২৫ সালের প্রথম আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপ জিতল ভারত।

এদিকে, ভারতকে শিরোপা জিতিয়ে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না অমল মজুমদার। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। বুঝতে পারছি না সবটা। এই জয় দলের কৃতিত্ব। ওরা প্রাণপাত করেছে ট্রফিটার জন্য। আজ গোটা ভারত ওদের নিয়ে গর্বিত।’ একটা সময় হারের হ্যাটট্রিক করে বিশ্বকাপে বেশ ব্যাক ফুটে চলে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রূপকথার জয়ে ইতিহাস লিখলেন স্মৃতি মন্ধানারা। আর তাদের জয়ের পেছনের নায়ক অমল মজুমদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *