মোহনবাগানের আঁতুড়ঘর আজ যেন ধ্বংসস্তূপ

Spread the love

ভেঙে যাচ্ছে মোহনবাগানের আঁতুড়ঘর, শ্যামবাজারের সেন বাড়ি। ধুলোয় মিশে যাচ্ছে সবুজ-মেরুন ইতিহাসের এক বড় অধ্যায়। শ্যামবাজারের শ্যাম পার্কের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সেন বাড়ি শুধু একটি প্রাচীন ভবন নয়, বরং মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এই সেন বাড়ির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিত্র ও বসু পরিবারের উদ্যোগে জন্ম নিয়েছিল মোহনবাগান ক্লাব। যেটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেছে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম গর্ব।

যদিও মোহনবাগানের জন্ম বসু পরিবারের বাড়িতে, তবু এই সেন বাড়িই হয়ে উঠেছিল ক্লাবটির প্রথম বাসস্থান, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম স্বপ্নপূরণের ঠিকানা। এখানেই কেটেছে ক্লাবের শৈশব-কৈশোর। বহু ঐতিহাসিক সভা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, খেলা-পূর্ব প্রস্তুতি—সব কিছুর সাক্ষী এই বাড়ির দরজাদরজা, বারান্দা, বৈঠকখানা। এখানকার মাটি, এই প্রতিটি ইট জানে সবুজ-মেরুনের সূচনা কীভাবে হয়েছিল।

কিন্তু আজ সেই ইতিহাসের ঘরটাই হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। আধুনিকতার জোয়ারে আর অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ছাপ। বহু বছরের রক্ষণাবেক্ষণের পরও, বিশাল এই বাড়িটি টিকিয়ে রাখা আর সম্ভব হয়নি। এক সময় যে বাড়িতে জমজমাট ছিল পারিবারিক মিলনমেলা, আড্ডা আর ইতিহাসচর্চা—আজ সেখানে শুধু ভাঙাচোরা ইট, খসে পড়া পালেস্তারা, আর নিঃশব্দ কান্না।এই বাড়ির প্রতিটি করিডোর, বড়গা, দরদালান, জানালা—সব কিছুতেই লেগে আছে উমাপতি কুমার, শৈলেন মান্না, চুনি গোস্বামীর পদচিহ্ন। মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসুও বৃহস্পতিবার এই বাড়িতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর একটি পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। স্মৃতির এই দেওয়ালকে ধরে রাখার আকুলতা ফুটে ওঠে তাঁর প্রতিটি বাক্যে।

আধুনিকতায় ঢেকে যাবে পুরনো দিনের স্মৃতি। এখানে তৈরি হবে বহুতল ফ্ল্যাট, আসবে নতুন বাসিন্দা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—সেই ফ্ল্যাটে কি খুঁজে পাওয়া যাবে মোহনবাগানের ইতিহাসের সেই শিকড়? পাওয়া যাবে কি সেই আড্ডার গন্ধ, সেই স্নিগ্ধ বিকেল, কিংবা কোনও বৈঠকখানার এক কোণে বসে জন্ম নেওয়া একটি ক্লাবের গল্প?

সময়ের নিয়মেই সব বদলায়, ইতিহাসও তার রূপ পাল্টায়। তবে কিছু কিছু জায়গা শুধু ইট-কাঠ-সুরকির স্থাপনা নয়—তা হয়ে ওঠে আবেগ, উত্তরাধিকারের প্রতীক। সেন বাড়ি ঠিক তেমনই এক স্মৃতির মিনার, যার ধ্বংস একমাত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঞ্চিত করবে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস থেকে।

এই বাড়ি ভেঙে গেলেও, সেই মাটি, সেই আকাশ—যেখানে একদিন মোহনবাগানের পতাকা প্রথম উড়েছিল—থেকে যাবে চিরকাল, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে। স্মৃতিকে ধরে রাখুন, কারণ ভবিষ্যৎ হয়তো আর এই ইতিহাসকে চিনবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *