১৯৪৭। দেশ স্বাধীন হচ্ছে। সঙ্গে দেশভাগও হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সিন্ধু নদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন। সিন্ধু নদের জলপ্রবাহের ক্ষেত্রে ভারতকে অ্যাডভান্টেজ দিলেন এএন খোসলা, স্বরূপ সিং এবং কাঁওয়ার সেন। শেষ পর্যন্ত এই তিন ইঞ্জিনিয়ারের অবদানই ভিত্তি হয়ে ওঠে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির।
স্যার সিরিল ব়্যাডক্লিফ ততদিনে পৌঁছেছেন ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত রেখা আঁকার জন্যে। সেই সময় এএন খোসলা এবং স্বরূপ সিং কাজ করতেন পঞ্জাবের সেচ দফতরে। ফিরোজপুর অঞ্চলের একটি সমস্যা নজরে পড়ল এই দু’জনের। সেখানেই অবস্থিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খালের নিয়ন্ত্রণ বিন্দু। এবং সেই অঞ্চল পাকিস্তানে পড়ার কথাবার্তা চলছে তখন। এর জেরে যে কী হতে চলেছে, তা সেই দুই ইঞ্জিনিয়ার বুঝে গিয়েছেন। এই বিষয়ে কাঁওয়া সেনকে তখন সতর্ক করলেন স্বরূপ। কাঁওয়ার তখন বিকানের এস্টেটের জল দফতরে কাজ করেন। তখন কাঁওয়ার সেনও বুঝতে পারেন যে ফিরোজপুর যদি পাকিস্তানে চলে যায় তাহলে বিকানেরের লাইফলাইন গঙ্গ খাল ভাগ হয়ে যাবে। এই গোটা বিষয়টি বিকানেরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বোঝান কাঁওয়ার।

এই বার্তা এরপর পৌঁছায় মহারাজা সদুল সিংয়ের কানে। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে মাহরাজা তখন মহারাজা হুঁশিয়ারি দেন, যদি এই খাল ভাগ হয়, তাহলে বিকানেরকে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। সেটা তখন কংগ্রেসের জন্যে রাজনৈতিক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াত। সেই কথা তখন জওহরলাল নেহরুর কানেও যায়। এই আবহে নেহরুও তখন মাউন্টব্যাটেনের ওপর বিষয়টি নিয়ে চাপ বাড়ান। ততক্ষণে কাজে লেগে পড়েছেন সরদার প্যাটেল এবং ভিপি মেনন। সীমান্ত কমিশনে নিজেদের নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে লবির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি শুরু করেন তাঁরা।
এই বহুমুখী চাপে রাজ দেয়। ফিরোজপুর, জিরা এবং ফজিলকা তেহসিল ভারতে চলে আসে। এর ফলে পাকিস্তানে প্রবাহিত খালগুলির ওপরে নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় ভারত। এর জেরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এই নিয়ে চাপানউতোর জারি থাকে স্বাধীনতার পরেও। শেষ পর্যন্ত এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। শেষপর্যন্ত স্বাক্ষরিত হয়েছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। পরবর্তী কাঁওয়ার সেন রাজস্থান খাল প্রকল্পের নীলনকশা তৈরি করেছিলেন। আজ যা ইন্দিা খাল হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই কাজের জন্যে পরে তিনি পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছিলেন।