রথযাত্রা মানেই সারা পুরীতে বাধভাঙা লোকসমাগম। বাংলাতেও মাহেশের রথযাত্রা ধুমধাম করে পালন করা হয়ে থাকে। তবে রথযাত্রা মানেই আমাদের অনেকের কাছে বিকেলবেলা পাঁপড় ও জিলিপি খাওয়া। অথচ পাঁপড় আর জিলিপি কোনওটাই বাঙালি খাবার নয়। তাহলে কেন এই খাবারগুলির এত চল?
জিলিপি আদতে একটি আফগান খাবার। ভারতবর্ষের কোনও পুরাণ বা প্রাচীন পুঁথিতে জিলিপি নামক খাবারটির উল্লেখ পাওয়া যায় না। মুঘল সম্রাটদের হাত ধরেই ভারতে তথা বাংলায় জিলিপি খাওয়ার চল শুরু হয়। পরবর্তীকালে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়
হয় এই খাবার। বর্ধমানের রাজা মহতাবচন্দ্র বাহাদুর তাঁর পাচকদের দিয়ে ইফতারের সময় মানকচুর জিলিপি বানিয়ে বিতরণ করতেন। তখন থেকেই দারুণ জনপ্রিয় হয় এই খাবার। বিভিন্ন মেলার খাবারের দোকানেও জায়গা করে নেয় খাবারটি। পাঁপড় কাহিনি।
পাঁপড় কাহিনি
এবার আসা যাক পাঁপড়ের গল্পে। পাঁপড়ও বাংলা ওড়িশার প্রচলিত খাবার নয়। এটি মূলত উত্তর ভারতের খাবার। আরও স্পষ্ট করে বললে পাঞ্জাব থেকে পাঁপড় এসেছে বাংলায়। রামায়ণেও পাঁপড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভরদ্বাজ মুনি রামচন্দ্র ও তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য যে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন, সেই খাদ্যতালিকায় পাঁপড় ছিল।
রথযাত্রায় কীভাবে শুরু এই চল?
কথিত আছে, স্নানযাত্রায় ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করার পর জগন্নাথদেবের জ্বর আসে। সেই সময় তিনি টানা ১৫ দিন নিভৃতবাসে থাকেন। যাকে অনবসর কাল বলে। এই সময় জগন্নাথদেবকে পাচন খাইয়ে সুস্থ করা হয়। তারপর বলরাম এবং সুভদ্রার সঙ্গে তিনি রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাত্রা করেন। মনে করা হয়, এই সময় মুখের স্বাদ বদল করতে তাঁর নোনতা খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল। তখনই নাকি পাঁপড় ভাজা খেয়েছিলেন জগন্নাথ। পাঁপড়ের পর মিষ্টি হিসেবে খান জিলিপি।

সাশ্রয়ী খাবার
সাধারণ মিষ্টির তুলনয় জিলিপি আর পাঁপড়ের দাম কম। তাই সাশ্রয়ী জিলিপি ধীরে ধীরে মেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবেই রথযাত্রার বিকেলে বিভিন্ন মেলায় স্থান করে নেয় জিলিপি। অন্যদিকে নোনতা খাবার হিসাবে জিলিপির সঙ্গী হয়ে ওঠে পাঁপড় ভাজা।