শৌর্যচক্র জয়ী সেই কনস্টেবলের মা’কে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত?

Spread the love

শহিদ কনস্টেবল মুদাসির আহমেদ শেখের মা’কে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। এমনই দাবি করল বারামুল্লা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের দিকে বারামুল্লা পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের শহিদ কনস্টেবল তথা মরণোত্তর শৌর্যচক্র সম্মানে ভূষিত মুদাসির আহমেদ শেখের মা’কে পাকিস্তানে পাঠানোর তোড়জোড় করা হচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবর ছড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। ওই খবরের কোনও সত্যতা নেই বলে বারামুল্লা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।

আর বারামুল্লা পুলিশের তরফে যখন সেই দাবি করা হয়েছে, যখন একটি মহলের তরফে দাবি করা হচ্ছিল যে শহিদ কনস্টেবেলের মা’কে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সেই ঘটনায় শহিদ কনস্টেবলের কাকা মহম্মদ ইউনুস তুমুল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানানো হয়।

একাধিক রিপোর্টে জানানো হয়, তিনি দাবি করেছেন যে শহিদ কনস্টেবলের মা পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। যা আদতে ভারতেরই এলাকা। তাই কোন যুক্তিকে তাঁকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইউনুস। যাতে শহিদ কনস্টেবলের মা’কে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও আর্জি জানান।

যে শাহের কাছে সেই আর্জি জানান শহিদ কনস্টেবলের কাকা, সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে সেই ছবিও পোস্ট করেছিলেন। একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়, ইউনুস বলেন যে ‘আমার ভাবি (বৌদি) পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা ছিলেন। যা আমাদের অংশ। শুধুমাত্র পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো উচিত।’

সেইসঙ্গে ইউনুস জানান, তাঁর দাদাও জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। আর তাঁদের ছেলে শহিদ কনস্টেবলের স্মরণে মেন বারামুল্লা টাউন স্কোয়ারের নামকরণও করা হয়েছে শহিদ মুদাসির চক। সেই পরিস্থিতিতে বৌদিকে যাতে পাকিস্তানে না পাঠানো হয়, সেই আর্জি জানিয়ে ইউনুস বলেন, ‘আমার ভাবি যখন এখানে এসেছিল, তখন বয়স ছিল ২০। এখানেই ৪৫ বছর ধরে থাকছেন। মোদী এবং অমিত শাহের কাছে আর্জি জানাচ্ছি যে এটা যেন হতে না দেওয়া হয়।’

আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনেও জানানো হয়, শুধু শহিদ কনস্টেবলের মা নন, বছরের পর বছর ধরে উপত্যকায় বসবাসকারী পাকিস্তানিদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাঁদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পঞ্জাবে। সেখান থেকে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে তাঁদের। আপাতত যে ৬০ জনকে পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে আছেন শহিদ কনস্টেবলের মা শামিমা আখতার।

অমরনাথ যাত্রায় হামলা রুখে দিয়েছিলেন

যে শামিমার ছেলে ২০২২ সালে ভারতের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৫ মে খবর এসেছিল যে আসন্ন অমরনাথ যাত্রায় হামলা চালাতে গাড়িতে করে তিন জঙ্গি যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর মিলেছিল। তাদের কাছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ছিল। সেই খবর পেয়ে উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লায় দ্রুত অভিযান শুরু করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী।

গুলির পর গুলি, রক্তাক্ত হয়েও জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয় করেছিলেন

অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কনস্টেবল মুদাসির দ্রুত সেই গাড়িকে চিহ্নিত করে ফেলেছিলেন। তখন পালানোর চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। তাদের আটকাতে নিজের জীবনের পরোয়া না করে মরিয়া লড়াই চালিয়েছিলেন কনস্টেবল। গাড়ির ভিতর থেকে এক জঙ্গিকে বের করেও এনেছিলেন। কিন্তু বাকি জঙ্গিদের তুমুল গুলিবর্ষণে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। প্রচুর রক্তক্ষরণও হচ্ছিল।

বারামুল্লা পুলিশের কথায় স্বস্তি ফিরল

কিন্তু সেইসব বিষয়কে উপেক্ষা করে ওই জঙ্গির সঙ্গে সামনা-সামনি লড়াই করেছিলেন কনস্টেবল মুদাসির। জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয়ও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও কনস্টেবলের জীবন বাঁচানো যায়নি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের মে’তে তাঁর স্বামীর সঙ্গে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর থেকে মরণোত্তর শৌর্যচক্র গ্রহণ করেছিলেন শামিমা। সেই শামিমাকেই পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে শুনে অনেকেই হতাশাপ্রকাশ করেছিলেন। তবে তাঁদের স্বস্তি দিল বারামুল্লা পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *