সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতন! জিএসটি বাকি ৭ কোটি

Spread the love

কারখানার এক সাধারণ শ্রমিক। মাস গেলে আয় মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। সদ্য বাবা হয়েছেন। স্ত্রী এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। দুঃস্থ সংসারে প্রতিদিনের লড়াইটাই বড় কঠিন। অথচ সেই শ্রমিকের নামেই নাকি বকেয়া রয়েছে সাত কোটি টাকার জিএসটি। এমনই অদ্ভুত, আতঙ্কজনক এবং চমকে দেওয়ার মতো ঘটনায় রীতিমতো চোখ কপালে ওই শ্রমিকের। ঘটনাটি হাওড়ার ডোমজুড়ের। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়।

জানা গিয়েছে, খাটোরা এলাকার বাসিন্দা ২৫ বছরের কার্তিক রুইদাসের এমনই ঘটনা ঘটেছে। তিনি ডোমজুড়ের জালান কমপ্লেক্সের একটি ছোট কারখানায় কাজ করেন। সকালবেলা কার্তিক সেখানেই কাজ করছিলেন। তখনই পরিবারের কাছ থেকে ফোনে খবর পান জিএসটি দফতরের ছ’জনের একটি টিম তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। খবর শুনে সাইকেলে চেপে তড়িঘড়ি ছুটে যান বাড়ি। এসে দেখেন আধিকারিকেরা বাড়ির প্রতিটি কোণা খুঁটিয়ে দেখছেন। কারণ? তাঁর নামে নথিভুক্ত একটি সংস্থা, যার নাম হল‘কেডি এন্টারপ্রাইজ’। নথি অনুযায়ী, সেই সংস্থার মালিক কার্তিক নিজে! আরও বিস্ময়কর তথ্য হল, এই কোম্পানির নামে মাসে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে, আর তার জিএসটি বকেয়া রয়েছে সাত কোটি টাকা!

যার ভাঙা ঘর, রোজ দু’বেলা খাবার জোটাতে যিনি হিমশিম খান, তিনি নাকি কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ী? কার্তিক নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আধিকারিকদের এই কথায়। আধিকারিকদের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিলেন, তিনি তো কারখানায় কাজ করেন, তাঁর নামে কোনও কোম্পানি থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

তবে ক্রমেই ঘটনার জট খুলতে শুরু করে। আধিকারিকদেরও সন্দেহ হয়। তখনই তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, জিএসটি পোর্টালে যেসব মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে, সেগুলি আসলে ভুয়ো। প্যান কার্ড, আধার, ঠিকানা সবই আসল, তবে মোবাইল নম্বর মেলেনি। সন্দেহ হয়, কার্তিকের পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে কেউ বা কারা তাঁকে ফাঁদে ফেলেছে। এই ঘটনায় ডোমজুড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কার্তিক। হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার শাখা ঘটনায় তদন্তে নেমেছে। কে বা কারা এই তথ্য জাল করে একটি ভুয়ো সংস্থা খুলে কার্তিকের নামে এতবড় আর্থিক দুর্নীতির নথি বানাল, তা নিয়েই তদন্ত করছে পুলিশ। প্রতিবেশীরা বলছেন, কার্তিকের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি জালিয়াত চক্রের কাজ হতে পারে। জিএসটি পোর্টালে সাধারণ মানুষের আসল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে জাল কোম্পানি তৈরি করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে কেউ বা কারা। কার্তিকের কথায়, ‘আমি কোনওদিন এত পয়সা দেখিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *