সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেন প্রেমিক সাগর বারিক।তবে যাকে সিঁদুর পরালেন সেই প্রেমিকা আর বেঁচে নেই। প্রেমিকার নিথর দেহে শাখা,পলা,সিঁদুর পরিয়ে ভালোবাসার পূর্ণ মর্যাদা দিলেন হাওড়ার যুবক।প্রেমিকার মৃতদেহ জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন প্রেমিক সাগর,স্বপ্ন ছিল ধূমধাম করে বিয়ে করার।সেই স্বপ্ন যেন এক লহমায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।ভালোবাসা হয়ত একেই বলে।আজকালকার দিনেও ভালোবাসা বেঁচে আছে তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ মৌলী সাগরের অমর প্রেম কাহিনী।
শুরুটা হয়েছিল আর পাঁচজনের প্রেমকাহিনীর মতনই। আট বছরের প্রেম,সেই প্রেমে সাত পাঁকে বাধা পড়ত প্রেমিক যুগল।কিন্তু হঠাৎই প্রেমে কাটা হয়ে দাঁড়ালো স্তন ক্যান্সার। হাওড়ার সাঁকরাইলের বছর ২৩ এর মৌলী মণ্ডল ও বছর ২৩ এর সাগর বারিক, স্কুল থেকেই শুরু হয় তাদের প্রেম ৷ প্রায় আট বছরের প্রেমের সম্পর্ক পরিণতিও পেত ৷ কিন্তু, তার আগেই ২০২৩ সালে হঠাৎই আকাশ ভেঙে পড়ল মৌলীর জীবনে ৷ তাঁর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে ৷ চিকিৎসাও শুরু হয় ৷ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর কেমো থেরাপিতে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন মৌলী৷
এরপর দুই পরিবারে মৌলী ও সাগরের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় ৷ কিন্তু মাস তিনেক আগে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন মৌলী ৷ ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে ৷ শরীরে জল জমতে শুরু করে, সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ৷ চিকিৎসকরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন ৷অবশেষে সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানেন মৌলী ৷ ২রা মে রাতে চিরঘুমে চলে যায় সে।শুরু থেকে মৌলীর লড়াইয়ে প্রতি মূহুর্তে তাঁর সঙ্গে থেকেছিলেন সাগর ৷আর সেই লড়াই শেষেও মৌলীকে নিজের করে নিলেন তিনি। মৌলীর ইচ্ছে ছিল, গোলাপের মালা পরে বিয়ে হবে তার ও তার সাগরের ৷ তাই মৌলীর ইচ্ছেকে সম্মান দিতে, তাঁকে গোলাপের মালা, মাথায় সিঁদুর, হাতে শাঁখা ও পলা পরিয়ে বিয়ে করলেন তিনি ৷শুধু বিয়ে নয় ৷ বিয়ের পর নববধূদের বাপেরবাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে হয় ৷ সেই নিয়ম মেনে মৌলীকে তার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ৷ শ্বশুরবাড়ি থেকেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মৌলীর৷হাওড়ার এই ভালোবাসা যেন ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকলো।এমন প্রেমিক যুগলকেই হয়ত বলে অমরসঙ্গী।
