স্কুল হস্টেলে উদ্ধার ছাত্রের দেহ

Spread the love

মালদার মানিকচকের একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত ছাত্রের নাম শ্রীকান্ত মণ্ডল (১৩)। তার পরিবারের দাবি, হস্টেলের ভিতরে মারধর ও মানসিক চাপে তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। রাতেই পুলিশ দেহ উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মানিকচক থানার পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও লিখিত অভিযোগ জমা না পড়লেও পরিবার জানিয়েছে, তারা থানায় অভিযোগ জানাবে।

শ্রীকান্তর বাড়ি মানিকচকের হিরানন্দপুর অঞ্চলের কেদারটোলা গ্রামে। তার বাবা প্রেম কুমার মণ্ডল পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবারে বাবা-মা ও তিন ভাইবোন রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে মানিকচকের ওই বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয় শ্রীকান্ত। স্কুলে মোট ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী, তার মধ্যে ১৩৬ জন হস্টেলে থাকে। শ্রীকান্তও হস্টেলেই থাকত। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ পড়াশোনা শেষ করে ছাত্ররা নিজেদের ঘরে যায়। কিছু সময় পর হস্টেল থেকে চিৎকার শোনা যায়। শিক্ষকরা জানতে চান, কে চিৎকার করছিল। প্রথমে কেউ কিছু না বললেও পরে শ্রীকান্ত স্বীকার করে নেয় যে সে-ই চিৎকার করেছে। এরপর সবাইকে খেয়ে ঘুমাতে বলা হয়।

রাতেই নিয়ম মাফিক হস্টেলের ঘর পরিদর্শনে যান প্রধান শিক্ষক সাজির হোসেন। সেই সময়ই একটি ঘরে শ্রীকান্তকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। শ্রীকান্তর পরিবার অভিযোগ করেছে, ছেলেকে ভয় দেখিয়ে বা শারীরিকভাবে আঘাত করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, যাতে সে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। তার আত্মীয়দের প্রশ্ন, ঘরে আরও ৪৪ জন ছাত্র ছিল, কেউ কিছু টের পেল না কেন? প্রথমে স্কুল জানায় শ্রীকান্ত অসুস্থ, পরে জানায় মারা গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু অ সামঞ্জস্য রয়েছে বলেই মনে করছে পরিবার।

অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা হলেও তারা হতভম্ব কেন ছেলেটি এমন করল। এক শিক্ষিকার কথায়, রাতে খাওয়ার পরে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কোনওরকম হেনস্থা বা শারীরিক নির্যাতনের প্রশ্নই নেই। এক সহপাঠী জানান, শ্রীকান্ত চিৎকার করার জন্য এক শিক্ষক তাকে সামান্য বকাঝকা করেছিলেন, কিন্তু কেউ মারেনি। স্কুলের কর্ণধার ও প্রধান শিক্ষক সাজির হোসেন বলেন, ছাত্রটির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। কেন এই অভিযোগ উঠছে, বুঝতে পারছেন না। পুলিশকে যথাসম্ভব সাহায্য করা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর তদন্তে আরও অগ্রগতি হবে। পরিবার যদি অভিযোগ দায়ের করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কী কারণে এই ছাত্রের মৃত্যু, তা জানতে সবাই এখন পুলিশের তদন্তের দিকেই তাকিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *