যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহরমসিয়াহাটি গ্রামের বাড়েদা পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল গত ২২ মে। এর জেরে ১৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর সঙ্গে হিন্দুদের বাড়িতে চলেছিল ভাঙচুর, লুটপাট। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে সেই তাণ্ডব চলেছিল। ইউনুসের পুলিশ অবশ্য বাঁচাতে আসেনি মতুয়াদের। তবে এই ঘটনা সামনে আসতেই যুক্তি দিতে শুরু করলেন মহম্মদ ইউনুস নিজে।
আর এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে বিশাল ট্রোল হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। এই পোস্টে ইউনুসের বার্তা শেষে লেখা ছিল – বুস্ট পোস্ট। অর্থাৎ, এই পোস্টটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই নিশ্চয় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে বার্তা দিয়েছিলেন ইউনুস। সেই টিম ‘বুস্ট পোস্ট’ লেখাটা না মুছেই তা পোস্ট করে দেয়। অনেকেই বিষয়টি ধরিয়ে দিয়ে ব্যঙ্গ করে।প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলের সেই পোস্টে তিনি ভারতীয় মিডিয়াকেই দুষেছেন। ইউনুসের দাবি, তারিকুল ইসলাম নামক স্থানীয় কৃষক দল নেতাকে নাকি খুন করেছিলেন হিন্দুরা। আর তাই প্রতিশোধ নিতে হিন্দুদের গ্রামে হামলা চালানো হয়েছিল। তাঁর এহেন যুক্তিতে প্রশ্ন উঠছে, কৃষক নেতা খুনের তদন্তে পুলিশ তাহলে কী করছে? এদিকে কোনও বিএনপি নেতা খুন হয়েছে বলে স্থানীয় হিন্দুদের ওপর অত্যাচার যুক্তিসঙ্গত?
মহম্মদ ইউনুসের অবশ্য বক্তব্য, ‘বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অভয়নগর উপজেলার দহর মাসিয়াহাটি গ্রামে মাছের ঘের নিয়ে বিরোধের পর স্থানীয় কিছু হিন্দু গ্রামবাসী তরিকুল ইসলামকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে তরিকুল এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে উত্তেজনা বেড়েছিল এলাকায়। এরপর হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এলাকার হিন্দুদের মালিকানাধীন প্রায় ২০টি বাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর করে।’ তাঁর এই বক্তব্যে প্রশ্ন থাকছেই, সরকার এবং প্রশাসনের এমনই দুর্দশা যে প্রায় একসপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার অফিশিয়াল রিপোর্ট নেই। বিবিসকে উদ্ধৃত করতে হচ্ছে ইউনুসকে?

এরপর এই বিষয়টি থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে ইউনুস লেখেন, ‘হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা গভীরভাবে দুঃখজনক হলেও, এটি সাম্প্রদায়িক হিংসা নয়। বরং কিছু হিন্দু গ্রামবাসীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতি ক্রোধ এবং প্রতিশোধ। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম ঘটনাটিকে একটি ‘ব্যবসায়িক বিরোধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর সাথে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণের সম্পর্ক নেই।’ তিনি যাই বলুন, প্রশ্ন থাকছেই, তারিকুলের হত্যার সঙ্গে সেই ১৮-২০টি বাড়ির সকলেই যুক্ত ছিল কি? আর তা হয়ে থাকলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় যে পুলিশ নয়, স্থানীয়রাই ‘বিচার’ করছে গুন্ডামির মাধ্যমে!
উল্লেখ্য, ইউনুস জমানায় সেই দেশের সংখ্যালঘুরা ক্রমেই অত্যাচারিত হচ্ছে। তবে নিজের মতো করে যুক্তি সাজিয়ে সেই সবের থেকে দায় ঝেরে ফেলছেন প্রধান উপদেষ্টা মহাশয়। সেই দেশে কয়েক হাজারের খুনে দায়ী রাজাকার বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। যে কি না আবার ফাঁসির আসামী। তবে সেখানেই জোর করে ভুয়ো মামলার আছিলায় আটকে রাখায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মতো হিন্দু সন্ন্যাসীকে।