মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুই চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছে এফবিআই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মার্কিন নৌবাহিনীর উপর নজরদারি চালানোর পাশাপাশি মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের চিনের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছিল।আর এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছে চিন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, অভিযুক্তরা হলেন ইউয়ান্সে চেন (৩৮) এবং লিরেন ‘রায়ান’ লাই (৩৯)।তাঁদের বিরুদ্ধে চিনের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটির (এমএসএস) হয়ে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড পরিচালনা, জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্যের বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা করা, নৌঘাঁটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং এমএসএস-এর পক্ষে লোক নিয়োগের চেষ্টা করারও অভিযোগ রয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি বলেন, ‘এই ঘটনায় আবারও প্রমাণ হল আমাদের সামরিক বাহিনীতে অনুপ্রবেশ এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ভেতর থেকে দুর্বল করার জন্য চিনা সরকারের ধারাবাহিক এবং আগ্রাসী প্রচেষ্টা চলছে।’
এরপরেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেজিং। চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, তারা এই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খুঁটিনাটি জানে না। তারা সর্বদা ‘চিনা গুপ্তচরবৃত্তি’ বলে ভিত্তিহীন প্রচারের বিরোধিতা করেছেন। তবে চিনের নাগরিকদের বৈধ অধিকারের সুরক্ষায় তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।এদিকে, মার্কিন তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই-এর এক হলফনামায় বলা হয়েছে, লাই এমএসএস-এর একটি নেটওয়ার্কের সদস্য। এই নেটওয়ার্ক সহজে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে, যাতে গোপন অভিযান পরিচালনা সহজ হয়। ২০২১ সালের দিকে লাই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী চেনকে নিজের সম্পদ বা ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করে।
হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, চেনের পরিচিতদের মধ্যে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার পর লাই তাকে বিদেশে গিয়ে এসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করার আহ্বান জানায় এবং প্রয়োজন হলে বিমান টিকিটের খরচও বহনের প্রস্তাব দেয়।তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এরপর তারা এমএসএস-এর এজেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০২২ সালে তারা মার্কিন অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার একটি লকারে ১০ হাজার ডলার নগদ অর্থ রেখে আসেন, যা তথ্য সংগ্রহের বিনিময়ে অন্যদের দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছিল।এরপরের বছরগুলিতে চেন নৌবাহিনী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে লাইকে পাঠান এবং সরাসরি এমএসএস-এর সঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে যান বলে হলফনামায় উল্লেখ আছে। এসব তথ্যের মধ্যে নৌবাহিনীর কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্যও ছিল। একবার চেন ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো শহরে গিয়ে নৌবাহিনীতে নতুন নিয়োগ পাওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন নামের একটি বিমানবাহী জাহাজ ঘুরে দেখেন।

হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘চিন সরকার তাদের নৌবাহিনী আধুনিক করতে এবং দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্লু-ওয়াটার নেভাল ক্যাপাবিলিটি অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে।’ হলফনামায় আরও বলা হয়, ‘এ কারণে পিআরসি সরকার এমএসএস-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে টার্গেট করে এবং গোপনে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালায়।’ উভয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফরেন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট (ফারা) আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অন্য কোন দেশের হয়ে কাজ করলে তা সরকারকে জানিয়ে নিবন্ধন করতে হয়।