৫০০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের খাঁড়ায় ভয় কি আদৌ পাচ্ছে ভারত?

Spread the love

‘সেতু সামনে এলে তা অতিক্রম করতেই হবে।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ইস্যুতে মন্তব্য করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যকারী দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক চাপাবে হোয়াইট হাউস। সম্প্রতি মার্কিন সংসদে এই সংক্রান্ত বিলে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এই বিল পাশ হলে ভারত ও চিনের বাণিজ্যে বিরাট ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বর্তমানে নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে রাশিয়ার ৭০ শতাংশ জ্বালানি তেল কেনে ভারত ও চিন।

এই আবহে রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবিত মার্কিন বিল নিয়ে গভীর নজর রাখছে ভারত। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানান, এই বিল কার্যকর হলে তার প্রভাব কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখবে ভারত। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও স্বার্থের কথা ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে জয়শঙ্কর জানান, ‘মার্কিন কংগ্রেসে কী ঘটছে তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যখন সেটি কার্যকর রূপ নেবে, তখনই আমরা এর প্রভাব বিশ্লেষণ করব।’ জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে লিন্ডসে গ্রাহামের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছি। আমাদের দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতও এই ইস্যুতে যোগাযোগ রেখেছেন। ভারতের স্বার্থ এবং বিশেষ করে জ্বালানি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা তাঁকে জানানো হয়েছে।’

সম্প্রতি এই বিলটির তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন রিপাকলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই বিলের উদ্দেশ্য হল রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধ বন্ধ করা। কোনও দেশ যদি রাশিয়ার থেকে পণ্য কেনে তবে তাদের উপর চাপানো হবে এই শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভারত ও চিনের এই জ্বালানি তেল কেনা রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের ‘ব্যাক বোন’ হিসেবে কাজ করছে। ফলে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে গ্রাহামের তরফে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, আগামী আগস্ট মাসে এই বিল সেনেটে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৮৪ শতাংশ সমর্থন পাওয়া গিয়েছে বিলটির পক্ষে।

এর আগে গত ২ এপ্রিল থেকে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানোর কথা বলেছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন। আগামী ৯ জুলাই ৯০ দিনের সময়সীমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির একেবারে শেষধাপে পৌঁছে গিয়েছে নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটন। এই প্রসঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় ট্রাম্প জানান, ‘আমার মনে হয় আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চলেছি। এবং এটি একটি ভিন্ন ধরনের চুক্তি হতে চলেছে। এটি এমন একটি চুক্তি যার ফলে আমরা ভারতের বাজারে প্রবেশ ও প্রতিযোগিতা করতে পারব। ভারত কাউকেই তাদের বাজারে প্রবেশ করতে দেয় না। আমার মনে হয় ভারত আমাদের প্রবেশ করতে দেবে, এবং যদি তারা তা করে, তাহলে আমাদের অনেক কম শুল্কের চুক্তি হবে।’

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসার পরই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দু’একবার পুতিনের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা হলেও এ বিষয়ে খুব একটা সাফল্য পাননি তিনি। নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এই যুদ্ধ থামানোই ট্রাম্পের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই যে কোনও ভাবে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতেই কোমর বেঁধে নেমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকেই বিশ্ব জ্বালানি চিত্র বদলে গিয়েছে। ভারত পূর্বে যেখানে রাশিয়া থেকে মোট তেল আমদানির ১ শতাংশেরও কম করত, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিল কার্যকর হলে ভারতীয় তেল আমদানির উপর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *