২৬/১১-এর ভয়াবহ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ১০ জঙ্গিকে হিন্দি এবং স্থানীয় আচার ও রীতি শেখানো হ্যান্ডলারের বিচার শুরু হচ্ছে অবশেষে। জাবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দালের বিচার দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত ছিল। কারণ এর আগে নিম্ন আদালত এক নির্দেশে বলছিল, অভিযুক্তদের হাতে গোপন নথি তুলে দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে সোমবার বোম্বে হাইকোর্ট সেই নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে। আর এই আবহে এবার জাবিউদ্দিন আনসারির বিচার শুরু হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, মামলার স্বার্থে জাবিউদ্দিন কিছু গোপনীয় তথ্য দাবি করে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, মামলা সংক্রান্ত গোপন তথ্য় জাবিউদ্দিনকে দেওয়া হোক। তবে সেই গোপনীয় তথ্য জাবিউদ্দিনের হা তুলে দিতে চায়নি কর্তৃপক্ষ। এই আবহে দিল্লি পুলিশ, কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রক উচ্চ আদালতে মামলা করেছিল। নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশিকা বাতিলের আবেদন জানিয়েছিল সরকার পক্ষ। এই আবহে ২০১৮ সাল থেকে জাবিউদ্দিনের বিচার প্রক্রিয়া থমকে ছিল।
উল্লেখ্য, জাবিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জঙ্গি হামলা পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিল সে। এছাড়াও মুম্বইয়ের বিষয়ে জঙ্গিদের তালিম দিয়েছিল সে। তাদের সে শিখিয়েছিল হিন্দি। এই জাবিউদ্দিনের অভিযোগ ছিল, তাকে সৌদি আরবে ধরে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল বিচারের জন্য। সেই দাবি প্রমাণের স্বার্থে কিছু গোপন নথি হাতে পাওয়ার দাবি করেছিল সে। এদিকে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল দাবি করে, জাবিউদ্দিন আনসারিকে দিল্লি বিমানবন্দরের বাইরে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই জাবিউদ্দিন লস্করের সঙ্গে যুক্ত। এই আবহে ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত নির্দেশ দেয়, জাবিউদ্দিনের দাবি অনুযায়ী তার হাতে যেন গোপন সব নথি তুলে দেওয়া হয়। তবে উচ্চ আদালতে সলিসিটর জেনারেল তষার মেহতা দাবি করেন, ‘আইনের পক্ষে নিম্ন আদালতের এই নির্দেশ খুব বাজে হবে।’ এই আবহে উচ্চ আদালত সরকারের দাবি মেনে নিম্ন আদালতের নির্দেশকে বাতিল করে দেয়।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই জুড়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সেই জঙ্গি হামলায় সব মিলিয়ে মোট ১৬৬ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। সেই হামলার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিদের মধ্যে একমাত্র আজমল কাসাবকে জীবিত ধরা সম্ভব হয়েছিল। ২০১০ সালে আজমলকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল বিশেষ আদালত। ২০১২ সালের নভেম্বরে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। জাবিউদ্দিনের অভিযোগ, সে এই হামলার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিদের হ্যান্ডলার হিসেবে কাজ করেছিল। ২০০৬ সালের ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হয়েছিল এই জাবিউদ্দিন আনসারিকে। এর মাঝে নাকি এই জাবিউদ্দিন বাংলাদেশ পালিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। পরে ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সঙ্গে যুক্ত হয় সে। করাচির থেকে জঙ্গিদের হ্যান্ডলারের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডিং থেকে জাবিউদ্দিনের গলার স্বর চিহ্নিত করেছিলেন তদন্তকারীরা। ২০১২ সালে তদন্তকারীরা জানতে পারে এই জাবিউদ্দিন সৌদি আরবে আছে। পরে সৌদি আরব থেকে তাকে ভারতে ডিপোর্ট করা হয়েছিল।
