পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ঘরের মাঠে মোহনবাগান যখন পরপর দু’বার আইএসএলের লিগ শিল্ড জিতে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে নামছে, তখন কি আর সেই ম্যাচ না দেখে থাকা যায়? সেটার উত্তর পেতে এক মাইক্রোসেকেন্ডও লাগেনি লেকটাউনের মেয়ে সম্পূর্ণা সিনহার। আর দিমিত্রি পেত্রাতোসের ৯২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের গোলে মোহনবাগানের সেই ঐতিহসিক শিল্ড জয়ের সাক্ষী থেকে বাড়ি ফিরেছিল। তারপর দিয়েছিল পরীক্ষা। আর তাতে বাজিমাত করেছে সম্পূর্ণা। কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এক্সামিনেশনের (সিআইএসসিই) দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা আইসিএসইয়ে ৯৯.৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ‘মোহনবাগানের মেয়ে’। কাউন্সিলের তরফে কোনও মেধাতালিকা প্রকাশ করা না হলেও যা নম্বর পেয়েছে, তাতে দেশে তৃতীয় হয়েছে। আর সেই সম্পূর্ণাকে সংবর্ধিত করল মোহনবাগান কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষার মধ্যেই ম্যাচ দেখতে এসেছিল কেন? সাফ কথা সম্পূর্ণার
সোমবার বাবা ও মায়ের সঙ্গে মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে আসে সম্পূর্ণা। সেখানে নিউ টাউনের দিল্লি পাবলিক স্কুলের (ডিপিএস) ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারইমধ্যে সম্পূর্ণা জানায়, বাবা এবং মাও মোহনবাগানের আদ্যোপান্ত মোহনবাগানের সমর্থক। তাই কোনওদিন তাঁরা বাধা দেননি। আর তাছাড়া বছরভর পড়াশোনা করলে পরীক্ষার ঠিক আগে খেলা দেখলেও অসুবিধা হবে না। তাছাড়া এরকম ঐতিহাসিক লিগ শিল্ড জয়ের মুহূর্ত তো একবারই আসে। তাই ম্যাচ ওড়িশার বিরুদ্ধে ২৩ ফেব্রুয়ারি ম্যাচ দেখতে চলে এসেছিল সম্পূর্ণা।
‘অঙ্ক পরীক্ষার থেকে শিল্ড জয় নিয়ে মেয়ের বেশি টেনশন ছিল’
আর সম্পূর্ণার মা পুরো বিষয়টা খোলসা করে দেন। স্কুলে মোহনবাগানের জার্সি পরে যেতে পারেননি। তাই সবুজ-মেরুন শাড়ি পরে স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মোহনবাগান তাঁবুতে এসে একরাশ গর্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই, আমার মেয়ে অঙ্ক পরীক্ষা নিয়ে না যতটা টেনশন করেছে, তার থেকে অনেক বেশি টেনশন করেছে যে মোহনবাগান লিগ শিল্ড পাবে কিনা। শেষ মিনিট পর্যন্ত ও চিংড়ি দেবতাকে ডাকছে, (গোলটা) যেন হয়ে যায়।’

মোহনবাগান সমর্থক মেয়ের জন্য গর্বিত বাবা
মায়ের মতোই মেয়েকে নিয়ে গর্বিত বাবা সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘ও যে ফুটবল খেলছে, খেলা দেখতে যাচ্ছে, পরীক্ষার আগেরদিন খেলা দেখব (বলছে), সুইমিং করব (বলছে), এই বিষয়ে আসলে অভিভাবকদের বোঝা খুব দরকার। (তাঁদের) বোঝা দরকার যে খেলা জিনিসটা কতকিছু শেখায়, সেটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
সেইসঙ্গে মজার ছলে তিনি বলেন, ‘১৯৯৫ সালে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছিলাম। আমি এটা ভেবে খু আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। ওকে (মেয়েকে দেখিয়ে) বলছিলাম যে আমি মোহনবাগান ক্লাবের থেকে বাড়িতে মিষ্টি পেয়েছি। আর তুই আমার থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়েছিস যে তুই মোহনবাগান ক্লাবের ভিতরে ঢুকে সংবর্ধনা পাচ্ছিস।’