সারা শরীরে আঁকা মহাত্মা গান্ধী, রানী লক্ষ্মীবাঈ এবং ভগৎ সিং সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর ট্যাটু। ট্যাটু রয়েছে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত ৬৩১ জন সৈন্যের নামও। এই অসাধারণ কাজটি করেছেন উত্তরপ্রদেশের হাপুরের এক যুবক। নাম অভিষেক গৌতম।
সম্প্রতি এই অসাধারণ কাজটি করে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এ একটি স্থান এবং লিভিং ওয়াল মেমোরিয়াল খেতাব অর্জন করেছেন অভিষেক গৌতম। ৩১ বছর বয়সী অভিষেকের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল লেহ লাদাখ ভ্রমণের মাধ্যমে।
লাদাখে যে অঞ্চলে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল সেখানে ভ্রমন করে আসার পর অভিষেক অনুপ্রাণিত হন। অভিষেক বলেন, লেহ লাদাখ যাওয়ার পথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একদল আমার এক বন্ধুকে বাঁচিয়েছিলেন, শুধু তাই নয় গোটা যাত্রা জুড়ে সৈন্যরা আমাদের নিরাপদ বোধ করান। তারপর থেকেই আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একটি অনন্য উপায় চিন্তা করছিলাম।
সৈন্যদের নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য জানার জন্য তিনি গোটা এক বছর কার্গিল সৈন্যদের নাম নিয়ে গবেষণা করেন। দেখা করেন নিহত সৈন্যদের পরিবারের মানুষদের সঙ্গে। এরপর তিনি দিল্লির এক বিখ্যাত ট্যাটু আর্টিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা অভিষেককে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে দেন।
অবশেষে সমস্ত সচেতনতার কথা মাথায় রেখে কার্গিলে কর্মরত অবস্থায় নিহত ৫৫৯ জন সৈন্যের নাম ট্যাটু করিয়েছিলেন অভিষেক। শুধু তাই নয়, শরীরে একটি স্মারক স্তম্ভ তৈরি করেছেন তিনি। প্রথমে এই বিষয়ে অভিষেক বাবুর স্ত্রী আপত্তি জানালেও পরবর্তীকালে সমর্থন জানান।
অভিষেক বাবু আরও বলেন, আজকাল ১৫ অগস্ট বা ২৬ জানুয়ারি অথবা ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সময় সকলে দেশপ্রেম দেখায়। কিন্তু যাদের পাশে সত্যিই থাকা দরকার তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন না কেউই। আমি হয়তো ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারিনি কিন্তু এই ট্যাটুর মাধ্যমে আমি আমার দেশপ্রেম সকলের সামনে উজার করে দেখাতে চাই।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে ভারত এবং পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে পথ ধরে যখন পাকিস্তানি সেনা ভারতে ঢুকতে যায় ঠিক তখনই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। তিন মাসের টানা যুদ্ধের পর অবশেষে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান বাহিনী পরাস্ত হয়ে ভারত ছাড়ে। প্রায় ৬ মাস ব্যাপী এই যুদ্ধে ভারতের ৫৫০ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। পাকিস্থানি সেনা মারা যান প্রায় ৭০০ জন।