২৫ জুন কসবার আইন কলেজে গণধর্ষণের পর রাত ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ চলে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। এরপর আর কতক্ষণ কলেজে ছিল মনোজিৎ মিশ্র, জাইব আহমেদরা? সেই সময় কী করছিল তারা? তারপর বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিল তারা? এই ঘটনা এখনও পর্যন্ত কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায় সহ মোট ১৬ জনকে জেরা করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ জুন রাতে ঘটনার পরে আর বেশিক্ষণ কলেজে ছিল না অভিযুক্তরা। পুলিশ তদন্ত করে জানতে চাইছে, এই তিনজন তারপর কোথায় গিয়েছিল। তারা প্রমাণ লোপাটের কোনও চেষ্টা করেছিল কি না। এদিকে ধৃতদের ফোনকলের রেকর্ড খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। এর থেকে জানা যাচ্ছে, ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল মনোজিৎ। এদিকে ঘটনার দিন অভিযুক্তরা যে পোশাক পরেছিল, সিসিটিভি দেখে তা চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের বাড়ি থেকে সেই পোশাক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এদিকে গ্রেফতারির এক ঘণ্টা আগেই নাকি মনোজিৎ ফার্ন রোডে গিয়েছিল একজনের সঙ্গে দেখা করতে। সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুনের গণধর্ষণের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ ৯ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত চালাচ্ছিল। সেই তদন্তভার এখন তুলে দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। অভিযোগ দায়েরের কয়েক ঘণ্টা পরই মনোজিৎ মিশ্র সহ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পরে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও। জানা যায়, এই নিরাপত্তারক্ষীর ঘরেই গণধর্ষণ করা হয়েছিল সেই ছাত্রীকে। তদন্তে নেমে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের কসবা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে একধিক প্রমাণ। যে কমন রুমে সেই নির্যাতিতা মারধরের অভিযোগ করেছিলেন, সেখানে রক্তের দাগ পেয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। এদিকে কলেজ থেকে হকিস্টিকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযোগ ছিল, সেই হকিস্টিক দিয়ে নির্যাতিতাকে মারধর করা হয়েছিল।
এদিকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে কলেজের সিসিটিভির হার্ডডিস্ক। পুলিশ জানিয়েছে, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ থেকে পাওয়া সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ২৪ বছরের এক ছাত্রীর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ জুন বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সাত ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজে কলেজ চত্বরের চারপাশের গতিবিধি ধরা পড়েছে।

ফুটেজে দেখা যায়, নির্যাতিতাকে জোর করে গার্ডের ঘরে ঢোকানো হয়, যেখানে তিন অভিযুক্ত তাকে যৌন নির্যাতন করে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মেয়েটির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাতে তিন অভিযুক্ত, নিরাপত্তারক্ষী ও নির্যাতিতার গতিবিধি দেখা যাচ্ছে। মূল অভিযুক্তের মোবাইল ফোন থেকে দেড় মিনিটের একটি ভিডিয়ো ক্লিপও উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিয়োটির ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠিয়েছিল পুলিশ। এছাড়া আরও এক অভিযুক্তও নাকি ঘটনাক ভিডিয়ো করেছিল নিজের ফোনে। জেরায় সে কথা উঠে এসেছে।এদিকে কসবা ল’ কলেজে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মেডিক্যাল রিপোর্ট সামনে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ছাত্রীর গলায় কামড়ের দাগ রয়েছে। এদিকে যৌনাঙ্গ ক্ষত রয়েছে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গায় মারধরের দাগও দেখা গিয়েছে। এই আবহে মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে এটাই মনে করা হচ্ছে যে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন সেই অভিযোগকারী তরুণী। যদিও অভিযুক্ত মনোজিতের দাবি, ছাত্রীর সম্মতিতেই সব হয়েছিল। তাই নাকি তার গলায় ‘লাভবাইট’ ছিল।