মঙ্গলবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য তাদের ফেডারেল বাজেট ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। বাজেটে দেশের সামগ্রিক ব্যয় ৭ শতাংশ কমিয়ে ১৭.৫৭ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (৬২ বিলিয়ন ডলার) করা হয়েছে শেহবাজ শরিফের সরকারের তরফে। কিন্তু গত মাসের সামরিক সংঘাতের আবহে প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সরকার ২০২৬ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য ২.৫৫ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (৯ বিলিয়ন ডলার) বাজেট পেশ করেছে। যা এই মাসে শেষ হওয়া পাকিস্তানি অর্থবছরে ছিল ২.১২ ট্রিলিয়ন। এদিকে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলারের বাজেটে ৯ বিলিয়ন ডলারই পাচ্ছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র। অর্থাৎ, মোট বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশেরও বেশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ঋণের বোঝায় পাকিস্তানের অবস্থা যখন বেহাল, তখন পরিকাঠামো বা অন্যান্য উন্নয়নের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বৃদ্ধি পাকিস্তানের জনগণের জন্য উদ্বেগজনক। যেখানে একটি বিশাল জনসংখ্যা মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে ভুগছে, সেখানে প্রতিরক্ষা খাতে এই বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেশের ওপর ঋণের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। এদিকে এতে দেশে সেনাবাহিনীর শক্তি আরও বাড়বে।এর আগে সোমবার পাকিস্তানে উপস্থাপিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, দেশের ঋণের বোঝা তীব্রভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬,০০৭ বিলিয়ন পাক রুপিতে। গত চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে পাকিস্তানের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৮৬০ বিলিয়ন রুপি। এক দশক আগে তা ছিল ১৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ গত এক দশকে পাকিস্তানের ওপর থেকে ঋণের বোঝা বেড়েছে ৫ গুণ। এদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঋণ ৫১,৫১৮ বিলিয়ন রুপি এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৪,৪৮৯ বিলিয়ন রুপি। দ্রুত বাড়তে থাকা ঋণের বোঝা যে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়িয়ে তুলতে পারে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা। দেশের ঋণের সুদের বোঝাও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে। সমীক্ষায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি যদি একই রকম থাকে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়তে পারে পাকিস্তান। এর প্রভাব পড়বে সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে পরিকাঠামো সবকিছুতেই। তারপরও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের অগ্রাধিকার জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের নয়, বরং যুদ্ধ উন্মাদনা।