ভিনেশ ফোগট পারেননি, কিন্তু প্যারিস অলিম্পিক্সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন আমন শেরাওয়াত। যে সমস্যা ভিনেশ ফোগটের ফাইনাল ম্যাচের আগে দেখা গেছিল, সেই একই সমস্যা দেখা দিল আমন শেরাওয়াতেরও। ম্যাচের আগের রাতেই বেড়ে গেছিল ওজন। কিন্তু সারারাত পরিশ্রম করে ভিনেশ নিজের ওজন আয়ত্তে আনতে পারেননি, মাত্র ১০০ গ্রামের জন্য স্বপ্ন অধরা থেকে যায় তাঁর এবং ভারতবাসীর। ফাইনালে নামতে পারলে হয়ত সোনাও জিততে পারতেন দুরন্ত ফর্মে থাকা ফোগট, কিন্তু নামা হয়নি তাঁর।
আমন অবশ্য শেষ মূহূর্তে টানা শারীরিক কসরত করে নিজের ওজন কমিয়ে আনলেন নির্দিষ্ট মানের মধ্যেই। ৫৭ কেজি বিভাগের ফ্রিস্টাইল কুস্তির ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচের আগের রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাম ঝড়ালেন হরিয়ানার ২১ বছরের ছেলে, আর তাতেই জিতলেন নিজের কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্স ব্রোঞ্জ পদক। দেশ পেল প্যারিস থেকে ষষ্ঠ পদক।
বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে হারের পর দেখা যায়, আমন শেরাওয়াতের শরীরের ওজন রয়েছে ৬১.৫ কেজি, অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিভাগের ওজনের উর্ধ্বসীমার থেকে প্রায় ৪.৫ কেজি বেশি,কিন্তু কোচের পরামর্শেই মাত্র ১০ ঘন্টায় সেই ওজন কমিয়ে ফেলেন আমন। যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেন ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে নামার। শেষ পর্যন্ত পুয়ের্তো রিকোর দারিয়ান ক্রুজে ১৩-৫ ফলে হারিয়ে পদক জেতেন তিনি।
ভারতীয় কুস্তি দলের দুই কোচ জগমন্দর সিং এবং বীরেন্দ্র দাহিয়ার তীক্ষ্ণ নজরেই শেষ পর্যন্ত আমন ১০ ঘন্টায় ৪.৫ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ তাঁর সেমিফাইনাল শেষের পর টানা ১.৫ ঘন্টা ম্যাটে কুস্তির অনুশীলন সাড়েন ২১ বছর বয়সী আমন। এরপর এক ঘন্টা গরম জলে বাথ সেশন নেওয়ার পর রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ টানা এক ঘন্টা ট্রেডমিলে দৌড়ান আমন, যাতে অতিরিক্ত ঘাম ঝড়ে এবং দ্রুত ওজন কমে।
ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর আমনের প্রতিক্রিয়া, ‘রাতে তো ঘুম আসেনি, তাই যতক্ষণ জেগে ছিলাম বিভিন্ন কুস্তির ম্যাচ দেখছিলাম ’। তাঁর কোচ বীরেন্দ্র দাহিয়া জানান, প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমনের ওজন মাপা হচ্ছিল। সারারাত ঘুমোতে পারেননি তিনি, এমনকি সকালেও চোখ লাগেনি তাঁর।
মাঝে আধ ঘন্টার বিরতির পর পাঁচবার পাঁচ মিনিট করে সৌনা বাথ নেন আমন। এরপর দেখা যায়, তখনও ৯০০ গ্রাম ওজন বেশি রয়েছে আমনের। ওজন কমানোর বিষয়টা এমনিতে কুস্তিগিরদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু না হলেও ভিনেশের ঘটনা দেখে শিক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত সাবধানতা নিতে হয় ভারতীয় কুস্তিগির এবং তাঁর কোচকে। এরপর হাল্কা ম্যাসাজ নেওয়ার পর ১৫ মিনিট জগিং করেন আমন। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ দেখা যায় ওর ওজন ৫৬.৯ কেজি অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিভাগে অংশগ্রহণের জন্য ওজনের উর্ধ্বসীমার তুলনায় ১০০ গ্রাম কম। টানা ১০ ঘন্টার অনুশীলনে স্রেফ গরম জলে মধু এবং লেবু দিয়ে খেয়েছেন আমন, দু-একবার কেবল কফি খেয়েছেন।