তরুণী চিকিৎসকের যৌনাঙ্গ থেকে ১৫০ গ্রাম বীর্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সত্যিই কি ভাবা যায়? ২২ বছরের এক তরুণী ডাক্তারের উপর ঠিক কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে? এটাই কি হওয়ার ছিল অভয়ার সাথে? এই ১৫০ গ্রাম বীর্য নিশ্চয়ই একা কোনও পুরুষের নয়। স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে হয়ত জলের মতন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে সব।
আরজি কর কাণ্ডে অপরাধীর সংখ্যা একাধিক হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক। অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার একাই নয়, সেদিন রাতে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে। রবিবার, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর পূর্ব বর্ধমানের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী দাবি করেন, “একজনের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়।”
ডাক্তার গোস্বামী জানান, নিহত তরুণীর যৌনাঙ্গ থেকে প্রায় ১৫০ গ্রাম তরল নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে রক্তমাখা বীর্য থাকতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়, এটা একজনের বীর্য হতে পারে না। তিন-চারজনের বীর্যের উপস্থিতি থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “মেয়ের মা-বাবা এবং পরিবারের আশঙ্কা আমাদেরও আছে যে এটি একজনের ধর্ষণ নয়, এটি গণধর্ষণের ঘটনা। এত আঘাত একজনের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, এবং তাঁকে শ্বাসরোধ করে বা ঝুলিয়ে মারা একার পক্ষে সম্ভব ছিল না।”
ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন যে, অভিযুক্তের শরীরে আঘাতের তেমন কোনো চিহ্ন নেই। সাধারণত, ধর্ষিতা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু অভিযুক্তের মুখে বা হাতে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
পাশাপাশি ধর্ষক সঞ্জয় রায় সেইরাতে ঠিক কি কি করেছিল জানেন? সোনাগাছি থেকে জরুরি তলব ছিল আরজিকর হাসপাতালে। পুরুষ চিকিৎসক নাকি মহিলা টার্গেট কাকে খুঁজছিল বিকৃত মস্তিষ্কের এই অভিযুক্ত?
রাত সাড়ে তিনটের সময় আর জি কর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কেন ঢুঁ দেয় অভিযুক্ত সঞ্জয়? কেনই বা অত রাতে তার ট্রমা কেয়ারে যাওয়ার প্রয়োজন হল? কোনও মহিলার সন্ধানে, না কি পরিচিত কোনও চিকিৎসক বা ডাক্তারি ছাত্রকে খুঁজতে? সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই প্রশ্ন তুলেই তদন্ত করতে শুরু করে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের প্রশ্ন, আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হলের ভিতর মহিলা চিকিৎসকের দেহের খোঁজ পাওয়া ও পুলিশ পৌঁছনোর মধ্যবর্তী সময়ে কি তথ্য বা প্রমাণ লোপাট করা হয়? পুলিশের মতে, এই বিষয়গুলিও সিবিআই খতিয়ে দেখতে পারে।
কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির পক্ষে আর জি কর হাসপাতালে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারও পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের রোগীদের দেখভাল করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সঞ্জয় ও ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে প্রচণ্ড মদ্যপান করে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশকে জানান, সোনাগাছি থেকে বের হওয়ার সময় যখন সঞ্জয় তাঁকে জানায় যে, সে এক রোগীকে দেখতে আর জি করের ট্রমা কেয়ারে যাবে, তখন তিনি রীতিমতো অবাক হয়ে যান। তখন রাত তিনটে বেজে গিয়েছে। কোনও রোগীর অবস্থা অতটা খারাপ ছিল না যে, তাঁকে রাত তিনটের পর ট্রমা কেয়ারে দেখতে যেতে হবে। তিনি আর হাসপাতালে না গিয়ে চতুর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে ফিরে যান।কিন্তু সঞ্জয়কে জেরা ও সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ জেনেছে, একবার ট্রমা কেয়ারে সঞ্জয় গিয়েছিল।
কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটের পর সঞ্জয় রায়কে একাধিক অপারেশন থিয়েটারের ভিতর ঢুকতে দেখা যায়। পুলিশকে প্রাথমিকভাবে সে জানায়, ওটিগুলিতে তার পরিচিত এক রোগীকে খুঁজছিল সে। কিন্তু পুলিশের মতে, অত রাতে কোনও রোগীকে খুব আপদকালীন পরিস্থিতি ছাড়া অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় না। হাসপাতালে প্রতিনিয়ত যাতায়াতের কারণে সেই বিষয়টি খুব ভাল করেই জানত সঞ্জয়। সেই কারণেই পুলিশের প্রশ্ন, কাকে খুঁজতে অপারেশন থিয়েটারগুলিতে গিয়েছিল সে।পুলিশের একাংশের মতে, অপারেশন থিয়েটারে কোনও রোগিনী অথবা মহিলা চিকিৎসক থাকলে তাঁদেরও ‘টার্গেট’ করতে পারত সঞ্জয়।
যদিও তদন্ত শেষ করার আগে পর্যন্ত পুলিশের এও ধারণা, সঞ্জয় কোনও পরিচিত চিকিৎসক বা ডাক্তারি ছাত্রর খোঁজ করছিল। তাঁর সঙ্গে সঞ্জয়ের রাতে কী প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাতে সিসিটিভির ফুটেজে সঞ্জয়কে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। হাসপাতালের তিনতলায় তাকে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। চারতলায় সেমিনার হলের ভিতরে ঢুকে সে মহিলা চিকিৎসককে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে দেখে। এর পরই সে তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে খুন করে। তবে খুনের ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই তরুণীর দেহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা উদ্ধার করেন।